‘বাংলাদেশে সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাদরাসা, ও স্কুলে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে ২৪২ জন নারী শিক্ষার্থী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।তবে এসব ঘটনায় অধিকাংশ অভিযুক্ত রাজনৈতিক ছত্রছায়াসহ নানা কায়দায় পার পেয়ে যায়। পারিবারিক চাপ, সামাজিক কটূক্তি, লজ্জা ও প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতার ভয়ে ভুক্তভোগীদের ৯০ শতাংশ কোনো অভিযোগ করেন না। ’
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতি যৌন হয়রানির ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধনের আয়েজন করে জাতীয় মহিলা পরিষদ।
মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম, আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি, অ্যাডভোক্যাসি অ্যান্ড লবির পরিচালক জনা গোস্বামী, লিগ্যাল এইডের ঢাকা মহানগরের সম্পাদক শামীমা আফরোজ আইরিন।
বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান হওয়ার কথা। তার বিপরীতে সেখানে অসামাজিক কাজ হয়। যে বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে, তার মান আজ কোথায় পৌঁছেছে! তবে নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় আমরা জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীদের প্রতি অভিবাদন জানাই।
তিনি বলেন, শিক্ষক নিয়োগে এখন সর্বত্র দুর্নীতি। প্রথম হয়েও অনেকের চাকরি হয় না। অথচ পঞ্চম-ষষ্ঠ হয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়। তাদের পড়াশোনার, ক্লাস করানোর দক্ষতা দেখা হয় না। ফলে এর একটি প্রভাব পড়ে।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখছি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন কি ধরনের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কেউ অর্থ কেলেঙ্কারিতে, কেউ আত্মীয়-স্বজনকে এনে চাকরি দিচ্ছেন। এরা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়, তাহলে উন্নতি হবে কি করে।
নারীদের ওপর যৌন নিপীড়নের বিচারে সরকারকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
বক্তব্যে জনা গোস্বামী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ গণমাধ্যমে এসেছে। ভুক্তভোগী ওই নারী শিক্ষার্থী পরিবারের কাছে দেড় বছর থেকে বলছে, সে এই শিক্ষকের অধীনে কোনোভাবেই মাস্টার্স করবে না। এদের কোনো বিচার হয় না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কোনো যৌন হয়রানির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি।
তিনি বলেন, শিক্ষকদের হাতে নম্বর থাকে, ফলে শিক্ষার্থীরা ভয় পেয়ে আর অভিযোগ করেন না। হাইকোর্টের নির্দেশে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল করা নির্দেশ করা হয়েছে। কিন্তু এই সেলগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কি না, তার কোনো তদারকি নেই।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের রাজনীতি প্রবেশ করেছে। সেখানে নীল-সাদা দলের দৌরাত্মে একটি দুষ্টু চক্র তৈরি হয়েছে। সবাই নিজের দলের লোককে বাঁচিয়ে দিতে চায়।
বক্তব্যে সীমা মোসলেম বলেন, যৌন নিপীড়নের যেসব ঘটনা ঘটছে, তা শুধু নারীদের নয়, বরং বাংলাদেশের সমস্যা। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী কতৃক নারীদের হেনস্তা ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। অভিযুক্তরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পার পেয়ে যায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষকদের সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কেউ এর দায় এড়াতে পারে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে নারীরা বারবার পথে নামতে হচ্ছে। এসব বিষয়ে আইন রয়েছে, তবে সেসবের কোনো বাস্তবায়ন নেই।
শামীমা আফরোজ আইরিন বলেন, ভুক্তভোগী নারীদের ওপর সমাজ আঙুল তোলে। নারীরা সমাজের অনেক দিক দিয়ে দৃশ্যমান কাজ করছে। তবুও তারা পদে পদে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।