জামালপুর বিসিক শিল্প নগরীতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রাস্তার নির্মাণকাজ।
অনিয়মের প্রতিবাদ করায় লাঞ্ছিত হয়েছেন বিসিকের এক কর্মকর্তা।এতে ক্ষুব্ধ বিসিক শিল্প নগরীর প্রতিষ্ঠান মালিক ও কর্তৃপক্ষ।
এদিকে দরপত্র অনুযায়ী নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার দাবি স্থানীয়দের।
বিসিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়- জামালপুরসহ ৮ জেলার বিসিক নগরীতে রাস্তার নির্মাণকাজ করছে ঢাকার এম এ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড আরাফাত কনস্ট্রাকশন। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে জামালপুর বিসিক নগরীতে ৪৭৮২ বর্গ কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণকাজ চলছে।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে- বিসিক শিল্প নগরীতে কয়েকজন শ্রমিক রাস্তায় কার্পেটিং-এর কাজ করতে দেখা গেলেও সেখানে ঠিকাদারের প্রতিনিধি বা কোনো প্রকৌশলীকে পাওয়া যায়নি। তবে সেখানে দেখা যায় কয়েকজন প্রতিষ্ঠান মালিককে। তারা কাজের অনিয়মের প্রতিবাদ করলেও তা কর্ণপাত না করে কাজ করতে থাকে শ্রমিকরা। পরে পুলিশের সহায়তায় কাজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিসিক শিল্প নগরীর মেসার্স বারাকা ফিডসের অংশীদার মো. ফজলুর রহমান মাসুদ বলেন, দীর্ঘ এক যুগ পর আমাদের এখানে রাস্তার কাজ চলছে। এখানে ভালো রাস্তা না থাকায় আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন যে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে সেটিও বেশিদিন টিকবে না। কারণ এখানে নিম্নমানের ইট ও খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও অনিয়ম হচ্ছে। তাহলে এখানে সরকারের অর্থ খরচ করে লাভ কি?
এদিকে রাস্তার কাজে অনিয়মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে মঙ্গলবার সকালে লাঞ্ছিত হয়েছেন বিসিক শিল্প নগরী কর্মকর্তা এবং ড্রেন, রাস্তা ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক মো. মনজুরুল ইসলাম। এরপর প্রতিষ্ঠান মালিকদের প্রতিবাদে বন্ধ রাখা হয় রাস্তার নির্মাণকাজ।
ইঞ্জিনিয়ার ওয়ার্ক সপের স্বত্বাধিকারী মাহবুবুর রহমান বলেন, এখানে যেভাবে কার্পেটিং করা হচ্ছে তা খুবই নিম্নমানের। তারা বালুর ওপর কার্পেটিং করছে। এমন অনিয়মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিসিকের কর্মকর্তারা লাঞ্ছিত হয়েছেন। আমরা এমন নিম্নমানের কাজ চাই না। আমরা ভালো একটি রাস্তা চাই।
বিসিক শিল্প প্রতিষ্ঠান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক খান মিলন বলেন, আমাদের এই সড়ক দিয়ে সবসময় বিশ থেকে ত্রিশ টন মালবাহী গাড়ি যাতায়াত করে। সেই ক্ষেত্রে এই রাস্তা কোনোভাবেই টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। আজ বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে কার্পেটিং চলছে। এটা কোনো ভাবেই ঠিক নয়।
এনামুল হক খান মিলন আরও বলেন, আমরা এসব বিষয় বিসিক কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর তারা এখানে পরিদর্শন করতে আসে। সেই সময় এই শ্রমিকরা বিসিকের কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করে এবং অপমান অপদস্ত করে। আমরা চাই শিডিউল অনুযায়ী কাজ হোক। আমরা একটি ভালো রাস্তা চাই।
এসব বিষয়ে রাস্তার নির্মাণ কাজের ঠিকাদার আরাফাত মোবাইল ফোনে বলেন, বিসিকের কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়নি। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিসিকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে আমার কথা হয়েছে। আমি তাদের জানিয়েছি- কাজে যদি কোনো অনিয়ম থাকে তাহলে শ্রমিকরা সেটি সমাধান করবে। আর যদি বড় ধরনের কোনো অনিয়মের অভিযোগ থাকে তাহলে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। আমি নিজে জামালপুর গিয়ে সেসব দেখে আবার কাজ শুরু করবো।
বিসিক শিল্প নগরী কর্মকর্তা এবং ড্রেন, রাস্তা ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক মো. মনজুরুল ইসলাম বলেন, আমি অনিয়মের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছি। এ বিষয়ে আমি আইনানুগ ব্যবস্থা নেব কিনা, সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আর কাজের অনিয়মের বিষয়ে আমি ঠিকাদার ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।