নির্বাচনের আগে দেশের মহাসড়ক তথা লাইফলাইনগুলো সচল রেখে হাইওয়ে পুলিশ একটি দলের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে হাইওয়ে পুলিশের সেবা সপ্তাহ-২০২৪ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের আগে হাইওয়ে পুলিশ বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছিল। আমি তাদের বিরোধী দল বলব না, কারণ সংসদে তাদের অস্তিত্ব নাই। আমি বলব, তারা একটি দল যারা ষড়যন্ত্র ও পেশিশক্তিতে বিশ্বাস করে। তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়ক তথা লাইফলাইনগুলো সচল রেখেছে। সক্ষমতার সঙ্গে দেশের পণ্যপরিবহন স্বাভাবিক রেখেছে।
তিনি বলেন, দেশে এশিয়ান হাইওয়ে করিডোরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ১০০টির বেশি ইকোনোমিক জোন, বন্দরের সড়ক নিরাপদ রাখতে হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে যা যা করা দরকার, আমরা করব। কারণ যাতায়াত ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রাখতে হাইওয়ে পুলিশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, হাইওয়ে পুলিশ সক্ষমতার সঙ্গে কাজ করছে বলেই আমরা নিরাপদ সড়ক পাচ্ছি। তবে সড়কে দু-একটি ঘটনা যে ঘটছে না, এমন নয়। খুব শিগগিরই আমরা সমস্যাগুলো ওভারকাম করতে পারব।
সভাপতির বক্তব্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, হাইওয়ে পুলিশের যাত্রা শুরুর পর থেকে সীমিত জনবল নিয়েও সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। সরকার হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন স্মার্ট পুলিশ। এর অংশ হিসেবে হাইওয়ে পুলিশ অ্যাপ উদ্বোধন, বডি ওর্ন ক্যামেরা চালু করা হয়েছে। পুলিশের প্রতিটি ইউনিটে এ ধরনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২৫০ কিলোমিটারেরও বেশি সড়কে আধুনিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ক্যামেরাগুলোর কানেকশনও প্রায় ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয়ে এসেছে। এখন আমরা এর সুফল ভোগ করছি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগে যারা নাশকতা করেছিল, তাদের তথ্য আমরা পেয়ে গেছি। অনেক সময় এসব নাশকতার দায় পুলিশের ওপর ও সরকারের ওপর চাপিয়ে বিব্রত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ক্যামেরার মাধ্যমে নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের অপচেষ্টা নস্যাৎ করা হয়েছে। এসব ক্যামেরার মাধ্যমে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদেরও অটোমেটিকভাবে শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আইজিপি বলেন, নাশকতা করে সারাদেশে একটি দল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা করেছিল। তাদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সবাই কাজ করেছে। সবাই একসঙ্গে রাস্তায় ছিলাম, এর ফলে প্রতিটি গাড়ি রাস্তায় সচল ছিল। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত ছিল, লাইফলাইন সচল রেখে পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক রাখা হয়েছিল। আমরা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা রুখে দিতে পেরেছি।
তিনি বলেন, পুলিশের সদস্যরা কী করছেন, দেখার জন্য বডি ওর্ন ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের মোবাইলে অ্যাপসের মাধ্যমে কানেক্ট করে কে কি করছেন, তা দেখার সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। হাইওয়ে পুলিশের প্রতিটি স্থানে প্রতিটি থানায় কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে। আপনাদের সেবা পেতে কোনো সমস্যা হলে দ্রুততম সময়ে আমাদের জানান। আমাদের তদন্তদল আছে। ইউনিট ইনচার্জদের জানালে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে পুলিশের জিরো টলারেন্স। পুলিশের কোনো সদস্য আইনের ব্যত্যয় ঘটালে বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ প্রধান বলেন, একটি পণ্য যখন কারওয়ান বাজার আসে, তখন কত দাম থাকে, তারপর খোলা বাজারে কত থাকে, আপনারা দেখুন। কারা জিনিসের দাম বাড়াচ্ছে আপনারা খতিয়ে দেখুন। আমাদের কোনো সদস্য যদি কোনো অপকর্মে জড়িত থাকেন, জানান। প্রতিটি ঘটনায় আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করব।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান, খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি বেনজীর আহমদ, স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়েরর সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো. মসিউর রহমান রাঙ্গা প্রমুখ।