৪০০ বোমা তৈরি করে সাপ্লাই দেন ‘বোমা মাওলানা’

৪০০ বোমা তৈরি করে সাপ্লাই দেন ‘বোমা মাওলানা’

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী মুকিত হোসাইন ওরফে ‘বোমা মাওলানা’-কে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।  সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।

গ্রেপ্তার বোমা মাওলানা গান পাউডার সংগ্রহ করে প্রায় ৪০০ বোমা তৈরি করেন। এসব বোমা তিনি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সাপ্লাই (সরবরাহ) করেন। তার সাপ্লাই করা বোমার মধ্যে একটি বোমা ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।  

হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা অনেক দিন ধরে মুকিত হোসাইন ওরফে বোমা মাওলানার খোঁজে ছিলাম। তার নাম হলো মুকিত, তবে সবাই তাকে ডাকে বোমা মাওলানা নামে। এক সময় তিনি আলিয়া মাদরাসা ছাত্রদল শাখার সহ-সভাপতি ও সভাপতি ছিলেন।  

তিনি বলেন, পরে মুকিত ছাত্রদল মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৩-১৪ সালে বোমা বানাতে গিয়ে তার ডান হাতের কবজি উড়ে যায়। এরপর থেকে তার নাম হয় বোমা মাওলানা। দলীয় আনুগত্য ও উগ্র বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে তাকে মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মনোনীত করেন স্বয়ং তারেক জিয়া।

ডিবিপ্রধান বলেন, মহানগর জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে যে বোমাটি বিস্ফোরিত হয়েছিল, সেটির মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন বোমা মাওলানা। যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পাঠানো ১০ কেজি পরিমাণ গান পাউডার ভাটারা থানার যুবদলের আহবায়ক রবিউল ইসলাম নয়নের কাছ থেকে ২৭ অক্টোবর রাতে মতিঝিল ব্যাংক কলোনিতে বোমা মাওলানা রিসিভ করেন।  

তিনি বলেন, রিসিভ করা গান পাউডার দিয়ে কয়েক দফায় প্রায় চারশত হাতবোমা তৈরি করেন বোমা মাওলানা। পরে তিনি এসব বোমা সাপ্লাই দেন বিভিন্ন থানার যুবদলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবদের। তার সরবরাহ করা হাতবোমা থেকে একটি যুবদলের সদস্য সোহেল খান ও অভি আজাদ চৌধুরীর নির্দেশে ঢাকা মহানগর জজ কোট আদালতের প্রাঙ্গণে বিস্ফোরণ ঘটান ওয়ারীর আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া ও তার স্ত্রী হাফসা আক্তার।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, প্রতিটি যানবাহনে আগুন দেওয়ার জন্য আগুন দাতাদেরকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া  বিস্ফোরণ ঘটানো ও মশাল মিছিলের জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়া হয় মহানগর যুবদলের পক্ষ থেকে। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে প্রায় ছয়-সাত হাজার লোকের মিছিলে নেতৃত্ব দেন বোমা মাওলানা।  

হারুন অর রশীদ বলেন, নাশকতার জন্য যারা বোমা বানায় এবং বাস ও ট্রেনে যারা নাশকতা করে, তাদের অনেকের নাম পেয়েছি। এ বোমা মাওলানা ২৭ অক্টোবর একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। আর সেখানে বসে তিনি পরিকল্পনা করছিলেন কোথা থেকে বোমা বানানোর সরঞ্জাম সংগ্রহ করা যায়, আর কাকে দিয়ে এসব বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কাকে পঙ্গু করা যায়।  

তিনি বলেন, লন্ডন থেকে আসা নির্দেশে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক বা ভীতি ছড়ানোর কাজে ঢাকা মহানগর যুবদল দক্ষিণ অংশে আটটি টিম বা দল গঠন করা হয়। তার দায়িত্ব ছিল কেন্দ্রীয় যুবদল ও মহানগর যুবদলের সঙ্গে সমন্বয় করা। সমন্বয় করে বোমা বানিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো। এ ছাড়া তিনি ওয়ার্ড এবং থানা পর্যায়ের যুবদলের কর্মীদের দিয়ে যানবাহনে আগুন দেওয়ার কমপক্ষে ছয়টি ঘটনার সমন্বয় করেন। আমরা তার কাছ থেকে অনেক তথ্য পেয়েছি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার বোমা মাওলানা যুবদলের কর্মীদের শিখিয়ে দিতেন, কীভাবে আগুন লাগাতে হবে। আর বলতেন, তার বলা কায়দায় যদি আগুন লাগানো হয়, সেই ছবি যদি লন্ডনে পাঠানো হয়, তাহলে তাদের পুরস্কৃত করা হবে।

যুবদল সভাপতি টুকুকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তাকে গ্রেপ্তারের জন্য আমরা চেষ্টা করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৩
এসজেএ/আরএইচ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS