বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
ট্রাইব্যুনালের সদস্যরা হলেন: বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
দুপুরে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চেয়ে এ আবেদন করেন।
১৮ নভেম্বরের মধ্যে তাকে গ্রেফতার করে ট্রাইবুনালে হাজিরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তাজুল ইসলাম বলেন,
গ্রেফতারি পরোয়ানার তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়াও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, শিক্ষাবিদ ড. জাফর ইকবাল, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকসহ আরও ৪৬ জন।
‘সিসটেমেটিকভাবে জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে আওয়ামী লীগ। তাদের সরকারের সময় গুম, খুন, অপহরণের বিবরণ তুলে ধরে কীভাবে ফ্যাস্টিস্টে রূপ নিল’- এদিন ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর।
গ্রেফতারি পরোয়ানার তালিকায় আরও রয়েছেন: সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ পরশ, ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ, পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার, প্রলয় কুমার জোয়ারদার, ডিমপি কমিশনার (সাবেক) হাবিবুর রহমান, র্যাবের সাবেক ডিজি হারুন উর রশিদ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, তারেক সিদ্দিকি, বিচারপতি মানিক (সাবেক), অধ্যাপক জাফর ইকবাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
প্রসিকিউশন টিমের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ মিলেছে।
এদিন বেলা ১১টা ২০ মিনিটে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চাইবে- প্রসিকিউশন সেটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্র করে গত জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে নতুন প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থা গঠিত হয়। গণ-অভ্যুত্থানের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত গুম, হত্যা, গণহত্যাসহ ৭০টির বেশি অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমা পড়েছে।
স্বাধীনতার দীর্ঘ ৩৯ বছর পর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করতে ২০১০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। ওই বছরের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনালের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। পরে ২০১২ সালের ২২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। তবে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুটি ট্রাইব্যুনালকে একীভূত করা হয়। ফলে একটি ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারকাজ চলমান ছিল। আগের ত্রিশটি মামলা এখনও ট্রাইব্যুনালে চলমান রয়েছে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে হত্যা চালায়। প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারায় এ আন্দোলনে।