বাংলাদেশের সোয়া পাঁচ কোটির বেশি মানুষ তীব্র থেকে মাঝারি ধরনের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় আছে বলে জাতিসংঘের পাঁচ সংস্থার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে এক কোটি ৮৭ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় আছেন।
এদিকে, ২০১৬ সালের পর গত ছয় বছরে বাংলাদেশে তীব্র থেকে মাঝারি খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় থাকা মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ বেড়েছে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়।
জাতিসংঘের পাঁচ সংস্থার মধ্যে আছে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ‘দ্য স্টেট অব ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি ১২ জুলাই প্রকাশিত হয়৷
তীব্র খাদ্যসংকটের ব্যাখ্যায় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটা এমন এক পরিস্থিতি যখন মানুষের খাবার ফুরিয়ে যায়, কোনো কোনো দিন অভুক্ত থাকে। মানুষের স্বাস্থ্য বড় ধরনের ঝুঁকিতে থাকে।
আর মাঝারি ধরনের খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, এটা এমন পরিস্থিতি, যখন মানুষের খাদ্য পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা থাকে। বছরের কোনো কোনো সময় তাদের খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হয় অথবা খাবারের পরিমাণ ও মানের অবনমন ঘটে। অর্থ ও অন্য সম্পদের ঘাটতিতেই এমনটা ঘটে।
খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার কারণে মানুষের পুষ্টিজনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে। পুষ্টির অভাবে বাংলাদেশের পাঁচ বছর বয়সী ৩৯ লাখ শিশু খর্বকায়।
প্রতিবেদনের বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, করোনার কারণে কিছু মানুষের আয় কমেছে। তাতে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে দেশে পুষ্টির মান গত ১৩ থেকে ১৪ বছরে অনেক বেড়েছে। তিনি উপাত্ত তুলে ধরে বলেন, ২০০৯ সালে দেশে সবজির উৎপাদন ছিল ৩০ লাখ টন। এখন এর পরিমাণ দুই কোটি ২০ লাখ টন।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির কথাও বলা হয়েছে জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের ২২ শতাংশ পরিবার বন্যা এবং ১৬ শতাংশ মানুষ নদীভাঙনের শিকার।
আরও বলা হয়, করোনা মহামারির কারণে মানুষের আয়ের ওপর প্রভাব পড়ছে৷ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ৷ ফলে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি, বেড়েছে খাবারের দাম। তাতে কোটি কোটি মানুষের খাদ্যের নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে।
জাতিসংঘের পাঁচ প্রতিষ্ঠানের এই প্রতিবেদনকে বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান৷ তিনি বলেন, করোনাকালে নতুন করে মানুষ দরিদ্র হয়েছে, তা আমরা বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখিয়েছি। সে সময় আয়ের যে ধাক্কা মানুষ পেয়েছিল, সেটা অনেকেই সামলাতে পারেনি৷ এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি।
হোসেন জিল্লুর বলেন, মানুষের খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও বেড়েছে৷ এর মধ্যে বাড়িভাড়া, স্বাস্থ্য বা শিক্ষার মতো বিষয় আছে৷ বাড়তি চাপে মানুষ খাদ্য কেনা কমিয়ে দেওয় বা দিতে বাধ্য হয়।