পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র ১ দিন। শেষ মুহূর্তে চলছে কোরবানির পশু কেনাবেচার তোড়জোড়। তবে এবার কোরবানির জন্য হাটে পর্যাপ্ত গরু উঠলেও সেই তুলনায় ক্রেতা কম। ক্রেতাদের অভিযোগ, হাটে ক্রেতার চেয়ে; এমনকি কোথাও কোথাও গরুর চেয়েও দালালদের দৌরাত্ম্য অনেক বেশি।
গাবতলীসহ রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরে ক্রেতাদের এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
ক্রেতারা বলছেন, গরু কিনতে আসার পর দেখি হাটে গরুর চেয়ে দালাল বেশি। ক্রেতা এসে দেড় লাখ টাকা দাম বললে, পাশ থেকে এসে একজন বলে আড়াই লাখ। এভাবে প্রত্যেক বিক্রেতা কয়েকজন দালাল রাখছেন। শুনেছি গরুর দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে পারলে দালালদের মোটা অঙ্কের কমিশন দেওয়া হয়।
গাবতলীর হাটে আসা একজন ক্রেতা নিজের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে বলেন, দুই রকমের দালাল আছে হাটে। এক রকমের দালাল ক্রেতাদের সঙ্গে থাকেন। হাটে ঢুকলেই দেখবেন আপনার কাছে এসে বলবে দামাদামি কইরা কমায়ে দিব ভাই। লাখ টাকার গরু ৬০-৭০ হাজারে পাওয়ায়ে দিব। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব দালালদের সঙ্গে আগে থেকেই ব্যাপারীদের যোগসাজশ থাকে। আরেক ধরনের দালাল আছেন যারা ব্যাপারীদের সঙ্গে থাকেন। ক্রেতা আসলেই দাম বাড়িয়ে বলে গরুর দাম বাড়িয়ে দেন। এই দুই ধরনের দালালদের কারণেই বিপদে পড়েন ক্রেতারা।
বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা যায়, এবার কোরবানির ঈদে বেশির ভাগ গরুর দামই লাখ টাকার বেশি। ক্রেতারা বলছেন, দালালদের দৌরাত্ম্য ও ব্যাপারীদের খামখেয়ালিতে বেড়েছে গরুর দাম। অনেক ক্রেতা গরু কিনতে এসে নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
গরু কিনতে আসা আরেক ক্রেতা বলেন, গরু কেনার নিয়ত নিয়েই হাটে আসছিলাম। কিন্তু যে দাম, তাতে পোষায় না। এইটা প্রতি বছরের ঘটনা। আশা করি ঈদের আগের রাতে আইস্যা দাম কমবো, তখন কিনবো।
অনেকেই মনে করছেন, হাটে পর্যাপ্ত গরু আছে। তাই গরুর দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। ঈদের দু’একদিন আগে এসব গরুর দামই অনেক কমে যাবে। তাছাড়া অনেকে কেনার পর রাখার জায়গা না থাকায় আগে থেকে গরু কিনছেন না।
শেষ দিনের অপেক্ষা করলে গরুর দাম কমে যায়, এ অবস্থায় শুরুতে ব্যাপারীরা কেন ন্যায্য দামে গরু বিক্রি করেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে কয়েকজন ব্যাপারী বলেন, শুরুতে সবার মধ্যে একটা উৎসাহ থাকে। অনেকের মাথায়ই থাকে হাটের সবচেয়ে বড় গরু কিনবেন। তখন বিশাল লাভে গরু বিক্রি করা যায়। পরে কোরবানির আগে আগে কিছুটা কম দামে গরু ছাড়লে লোকসান হয় না। শেষের লোকসানের ভয়ে শুরুতে বেশি দামে বিক্রি করি। তখন যা বেচা হয় তাই লাভ।
ক্রেতার স্বল্পতার চাইতে গরুর দাম বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে অনেকেই বলছেন দালালদের সিন্ডিকেটের কথা। অভিযোগ, দালালদের কারণেই প্রতিবার হাটের শুরুতে গরুর দাম অনেক চড়া থাকে, যা ঈদ ঘনিয়ে আসলে কমে আসে।