সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া গ্রুপ খুলে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মূলহোতাসহ দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গ্রেপ্তাররা হলেন—চক্রের মূলহোতা ফারদিন আহমেদ ওরফে প্রতীক (২৫) ও মো. সাগর আহমেদ (২৪)।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান।
তিনি জানান, সিআইডির ঢাকা মেট্রো পূর্ব বিভাগের একটি আভিযানিক দল এলআইসি ইউনিটের প্রযুক্তিগত সহায়তায় গত ৬ নভেম্বর ভোরে পঞ্চগড় সদরের ধাক্কামারা এলাকা থেকে চক্রের মূলহোতা ফারদিন আহমেদ ওরফে প্রতীককে গ্রেপ্তার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই টিম ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল এলাকা থেকে চক্রের সহযোগী মো. সাগর আহমেদকে গ্রেপ্তার করে।
সিআইডি সূত্রে জানা যায়, প্রতারক চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে টেলিগ্রাম অ্যাপে ‘বিদেশি বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্ম’ নামে ভুয়া গ্রুপ খুলে অল্প সময়ে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে বিনিয়োগে প্ররোচিত করতো। ভুক্তভোগীরা যখন গ্রুপে যুক্ত হতেন তখন গ্রুপে কিছু সদস্য এখানে বিনিয়োগ করে কীভাবে লাভবান হয়েছেন, তা জানিয়ে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ পোস্ট দিতেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এসব ইতিবাচক পোস্টই ছিল প্রতারণার ফাঁদ। এভাবে ভুক্তভোগীরা প্রলুব্ধ হয়ে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হতেন এবং চক্রের ফাঁদে পড়তেন।
এরপর তৃতীয় ব্যক্তির নামে খোলা ব্যাংক ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) একাউন্ট ব্যবহার করে চক্রটি অবৈধভাবে টাকা লেনদেন করে আত্মসাৎ করতো। প্রতারণার শিকার বহু বিনিয়োগকারী এসব ভুয়া গ্রুপে অর্থ বিনিয়োগ করে ইতোমধ্যে সর্বস্ব হারিয়েছেন। এমনকি যেসব একাউন্টের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করা হতো, সেগুলোর মালিকরা অনেক সময়ই বিষয়টি না জেনে নিজেরাই অভিযুক্ত হয়ে পড়তেন।
এমন ঘটনায় গত ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর ডিএমপির পল্টন থানায় দুটি পৃথক মামলা হলে সেগুলোর তদন্তভার পায় সিআইডি। এরপর পুলিশের এই সংস্থা তদন্তে নেমে প্রতারক চক্রটিকে শনাক্ত করে দুজনকে গ্রেপ্তার করে।
তদন্ত সূত্রে আরও জানা যায়, চক্রের মূলহোতা ফারদিন আহমেদ টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে সক্রিয় থেকে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিতেন। তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ৩০টিরও বেশি ব্যাংক একাউন্ট, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) একাউন্ট এবং সিমকার্ড নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করতেন।
অন্যদিকে, তার সহযোগী সাগর আহমেদ ‘Rio’ নামের একটি ফেইক টেলিগ্রাম আইডি ব্যবহার করে ‘Alexa Wick’ নামের গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে কাজ করতেন, যার সদস্য সংখ্যা ছিল ৭ জন। তারা অনলাইন বিনিয়োগের নামে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
সিআইডি আরও জানায়, প্রতারণার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ নগদে রূপান্তরের জন্য তারা অভিনব কৌশল ব্যবহার করতেন। ফারদিন আহমেদ বিভিন্ন গাড়ির শোরুম থেকে ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে গাড়ি কিনে এক মাসের মধ্যে কম দামে বিক্রি করে কাগজে লোকসান দেখিয়ে নগদ অর্থ তুলে নিতেন। এই পদ্ধতিতেই প্রতারণার টাকা ক্যাশ আউট করা হতো।
গ্রেপ্তার ফারদিন আহমেদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে সিআইডি। সংস্থাটি জানায়, ফারদিনের নিয়ন্ত্রণাধীন একাউন্টগুলোর মাধ্যমে প্রায় পাঁচ কোটি টাকারও বেশি অর্থ লেনদেন হয়েছে। প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নাম, একাউন্ট তথ্য ও অর্থের গন্তব্য উদঘাটনের জন্য গ্রেপ্তার দুই আসামিকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হয়েছে।