হালদা নদীকে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

হালদা নদীকে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিবেশগত মান উন্নয়নের মাধ্যমে রুই জাতীয় মাছের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিতকরণ ও গাঙ্গেয় ডলফিনের আবাসস্থল সংরক্ষণের লক্ষ্যে হালদা নদীকে মৎস্য হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার।

সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় ও মানিকছড়ি উপজেলা, চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি, রাউজান, হাটহাজারী উপজেলা এবং পাঁচলাইশ থানার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হালদা নদী এবং নদী তীরবর্তী ৯৩ হাজার ৬১২টি দাগের ২৩ হাজার ৪২২.২৮০৫৯ একর জায়গা ‘হালদা নদী মৎস্য হেরিটেজ’ হিসেবে ঘোষণা করা হলো। এপ্রিল-জুন মাসে হালদা নদীর বিভিন্ন স্থানে রুই জাতীয় মাছের প্রজননের ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিষিক্ত ডিম পাওয়া যায়।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, গেজেট প্রকাশের দিন থেকে কয়েকটি শর্ত কার্যকর হবে। এ নদী হতে কোনো প্রকার মাছ ও জলজ প্রাণি ধরা বা শিকার করা যাবে না। তবে মৎস্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে প্রতি বছর প্রজনন মৌসুমে নির্দিষ্ট সময়ে মাছের নিষিক্ত ডিম আহরণ করা যাবে। প্রাণি ও উদ্ভিদের আবাসস্থল ধ্বংসকারী কোনো প্রকার কার্যকলাপ করা যাবে না। ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট বা পরিবর্তন করতে পারে এমন কোনো কাজ করা যাবে না । মাছ, ডলফিন ও অন্যান্য জলজ প্রাণির জন্য ক্ষতিকারক কোনো প্রকার কাজ করা যাবে না। নদীর চারপাশের বসতবাড়ি, শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পয়ঃপ্রণালী সৃষ্ট বর্জ্য ও তরল বর্জ্য নির্গমন করা যাবে না। কোনো অবস্থাতেই নদীর বাঁক কেটে সোজা করা যাবে না। 

এছাড়া হালদা নদীর সাথে সংযুক্ত ১৭টি খালে প্রজনন মৌসুমে (ফেব্রুয়ারি-জুলাই) মৎস্য আহরণ করা যাবে না। হালদা নদী এবং এর সংযোগ খালের ওপর নতুন করে কোনো রাবার ড্যাম এবং কংক্রিট ড্যাম নির্মাণ করা যাবে না। 

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, হালদা নদী মৎস্য হেরিটেজ তদারকি কমিটি এ অনুমতি ব্যতিরেকে হালদা নদীতে নতুন পানি শোধানাগার, সেচ প্রকল্প স্থাপনের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করা যাবে না। পানি ও মৎস্যসহ জলজ প্রাণির গবেষণার ক্ষেত্রে হালদা নদী মৎস্য হেরিটেজ তদারকি কমিটির অনুমতি ব্যতীত কোন দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তি হালদা নদী ব্যবহার করে কোনো গবেষণা কাজ করতে পারবে না। মাছের প্রাক-প্রজনন পরিভ্রমণ সচল রাখার স্বার্থে হালদা নদী এবং সংযোগ খালের পানির প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। সারা বছর হালদা নদীর কর্ণফুলী মোহনা থেকে নাজিরহাট ব্রিজ (অভয়াশ্রম এলাকা) পর্যন্ত ইঞ্জিন চালিত ভারী নৌ-যান (বালুবাহী ও পণ্যবাহী নৌকা এবং ড্রেজার) চলাচল করতে পারবে না। 

হালদা এবং তার শাখা নদীর বালুমহাল ইজারা বন্ধ করা এবং ড্রেজার দিয়ে/ক্ষতিকর পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন করা যাবে না। নদীর অববাহিকা অঞ্চলে কোনো প্রকার তামাক চাষ করা যাবে না। নদীর অববাহিকা অঞ্চলে কৃষি জমিতে ক্ষতিকর কোনো কীটনাশক বা বালাইনাশক ব্যবহার করা যাবে না। নদীর পাড় সংলগ্ন এলাকায় কোন প্রকার ব্রিক ফিল্ড স্থাপন করা যাবে না।

উন্নততর পরিবেশগত এবং প্রতিবেশগত ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে এলাকার সীমা-পরিসীমা নির্ধারণসহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সময়ে সময়ে বিধি-নিষেধ আরোপসহ প্রজ্ঞাপনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে জারিকৃত গত ১৩/১২/২০২০ তারিখের ৩৩.০০.০০০০.১২৭.২৩.০০১.২০-৩৪৩ সংখ্যক প্রজ্ঞাপনটি এতদ্বারা বাতিল বলে গণ্য হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS