পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারে প্রধান শেখ হাসিনা ইন্টারভিউ (সাক্ষাৎকার) দিতে চাইলে ইন্টারভিউ নেবেন মন্তব্য করে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছেন সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার এই মন্তব্য নিয়ে নানামুখী সমালোচনা চলছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, হাসিনার ইন্টারভিউ নেওয়ার ইচ্ছে তাকে নরমালাইজ করার চেষ্টা কিনা?
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনায় অংশ নেন খালেদ মুহিউদ্দীন। ওই আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের তরফ থেকে প্রশ্ন ওঠে শেখ হাসিনার ইন্টারভিউ সংক্রান্ত বিষয়ে। এ সময় খেদ প্রকাশ করেন খালেদ। তিনি নিজেই প্রশ্ন করেন, হাসিনাকে ইন্টারভিউ দেওয়া মানে তাকে নরমালাইজ করা?
নিউইয়র্কভিত্তিক সংবাদ প্রতিষ্ঠান ‘ঠিকানা’র এই সাংবাদিক বলেন, জার্নালিজম সবসময় যে বিষয়টা সবচেয়ে মাথায় রাখে, সেটা হচ্ছে পাবলিক ইন্টারেস্ট। এখন জনগণের আগ্রহের জায়গা থেকে কেউ কেউ বলছেন, শেখ হাসিনা তো সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তার ইন্টারভিউ নেওয়া উচিত। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী যিনি নারী হত্যা, শিশু হত্যা, মানুষ হত্যা অনেক কিছুর সঙ্গে জড়িত, তাকে ইন্টারভিউ দেওয়া কি তাকে নরমালাইজ করা হবে না? আমি আপনাদের বলি, পাঁচ লাখ ইন্টারভিউও শেখ হাসিনাকে নরমালাইজ করতে পারবে না।
‘শেখ হাসিনা এখন ভারতে অবস্থান করছেন এবং সেখানকার কিছু মিডিয়া তার হয়ে প্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু হাসিনা তাদের কেন সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন না? ওর ইন্টারভিউ দেওয়ার মুখ আছে? ওর ইন্টারভিউ করা মানে ওকে নরমালাইজ করা? এইটা এথিক্সের মধ্যে আটকাবে? আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, পৃথিবীর কোন সাংবাদিক আছে এখন শেখ হাসিনার ইন্টারভিউ নিতে চাইবে না? শি ইজ দি মোস্ট সট আফটার পারসন (তার বিষয়ে উৎসাহ আছে) এখন ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য। কারণ তাকে এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে- ১৪০০ খুন সে কোথা থেকে করলো? এই কথা বলার জন্য পুরো স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল আমি খারাপ!’
এ সময় তিনি তাকে প্রশ্ন করা কয়েকজন সাংবাদিকের জ্ঞানবোধ নিয়েও কথা বলেন। খালেদ বলেন, ‘সাংবাদিকরা আসছে আমাকে জ্ঞান দিতে। আমি একশবার বলবো, শেখ হাসিনার ইন্টারভিউ এখন কোন সাংবাদিক নিতে চাইবে না?’
অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেওয়া একজন বলেন, ‘আপনি হাসিনাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন।’ উত্তরে খালেদ পাল্টা প্রশ্ন করেন, “সে কি সাবেক প্রধানমন্ত্রী না? অনেকে বলছেন শেখ হাসিনাকে ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী’ বলা মানে তাকে স্বীকৃতি দেওয়া। উনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বললে কী, এখনকার রাষ্ট্রপতি তো ওনারই নিয়োগপ্রাপ্ত। আমি যদি একবার রেফারেন্সে বলি, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইন্টারভিউ করতে চাই’, সেটা আমার বক্তব্যের মূল অর্থ বদলায় না।”
তিনি যুক্তি দেন, ‘উনি আমার প্রধানমন্ত্রী নন, কারণ উনি গণতন্ত্রের মাধ্যমে আসেননি, জনগণের ভোটে আসেননি। তাই আমি বলি এই সরকার আমার না। কিন্তু এর মানে এই না যে আমি সরকারের অস্তিত্বই স্বীকার করি না।’
আলোচনার শেষ দিকে খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, ‘এগুলো নরমালাইজ করে কী হবে? শেখ হাসিনা আইসা বইসা পড়বে? আমি তো বললাম, ৫০০ ইন্টারভিউ দিলেও ওকে নরমালাইজ করা যাবে না। শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় ছিল, প্রতিদিন ৫০টা এরকম ইন্টারভিউ দিত, ৫০০ বার প্রচার হতো। তবু কি জনগণ তাকে গ্রহণ করেছে? না। জনগণ সব জানে।’