পতিত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ঐক্য মজবুত রাখতে হবে: মামুনুল হক

পতিত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ঐক্য মজবুত রাখতে হবে: মামুনুল হক

পতিত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সবার গড়ে ওঠা রাজপথের ঐক্য আরও মজবুত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।

তিনি বলেছেন, আমি উদাত্ত আহ্বান জানাব—শেখ হাসিনাসহ পতিত স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমাদের সবার গড়ে উঠা রাজপথের ঐক্য আরও শক্ত ও মজবুত রাখতে হবে।

শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জেলা শাখার আয়োজনে এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মামুনুল হক এ কথা বলেন। শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার বিচারের দাবিতে এবং নৈরাজ্যবাদ প্রতিরোধে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির তীব্র সমালোচনা করে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ১৫ বছরে নরেন্দ্র মোদীর হিন্দুত্ববাদী সরকার বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থের প্রতি একচুল পরিমাণ ভ্রক্ষেপ করেনি। বরং তারা তাদের হিন্দুত্ববাদকে বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে তাদের সেবাদাসী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল।

‘সেই সেবাদাসীকে (শেখ হাসিনা) ক্ষমতার মসনদে রাখার জন্য সব কূটনৈতিক সভ্যতা বর্জন করে ভারত। একইসঙ্গে কূটনৈতিক সৌজন্যতাকে রক্ষা না করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতিটি চেষ্টাকে নস্যাৎ করার জন্য ভারত অব্যাহতভাবে চক্রান্ত চালিয়ে গেছে। এখনো ভারত বাংলাদেশের বিরোধিতার মিশন থামায়নি এবং ষড়যন্ত্রের পথ থেকে ফিরে আসেনি। ’

তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আওয়ামী দুঃশাসন যেটা, বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন নিয়ে তারা বাংলাদেশকে শাসন করেনি, তারা দেশের কল্যাণে ও স্বার্থে শাসন করেনি। তারা আরেকটি দেশের স্বার্থে বাংলাদেশের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করেছিল। এ ক্ষেত্রে আমি ওই দেশ ভারতের নাম উল্লেখ করি।

মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে পালিয়ে যাওয়া খুনি শেখ হাসিনা ও তার সব দোসরকে ভারত নিজের পক্ষে আশ্রয় দিয়েছে। আশ্রয় দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি, তাদের আবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। সেখানে বসে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়ে বলেন, ইতোমধ্যে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। আপনারা সেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে কার্যকর করুন।

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার খুনি বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শহীদ হয়েছেন শত শত ছাত্র ও তৌহিদী জনতা। যাদের নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমি শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।

মামুনুল হক বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা নয়, আসলে তার বিরুদ্ধে কয়েক হাজার হত্যা মামলা হওয়া উচিত। সে বাংলাদেশে অনেক গণহত্যা চালিয়েছে। সামরিক আইনে শেখ হাসিনার বিচার হওয়া উচিৎ। দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে সেনাবাহিনী ও বিডিআরকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হওয়া উচিৎ।

তিনি বলেন, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে নবীপ্রেমিক জনতাকে হত্যা করার জন্য তার বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা করতে হবে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। আমরা জোর দাবি জানাই, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে শাপলা চত্বরের গণহত্যার জন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা দায়ের করতে হবে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে মামুনুল হক বলেন, ধারাবাহিক রক্তের সিঁড়ি বেয়ে আজ বাংলার ছাত্র-জনতা যে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে, বাংলাদেশের মানুষ এখন মুক্ত এবং স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে। বাংলাদেশের মানুষ আজ স্বাধীনতা উদযাপন করছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি ধর্মের মানুষ, প্রতিটি জনগষ্ঠেী নিজ নিজ অঙ্গনে নিজেদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা উপভোগ করছে।  

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা লিয়াকত হুসাইনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবু সাঈদ, ফয়সাল আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সেক্রেটারি মাওলানা ছানা উল্লাহ কাসেমী।

আরও বক্তব্য দেন চাঁদপুর জেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল বাকি, সহ-সভাপতি মাহমুদ উল্লাহ খান, আবুল বাসার প্রমুখ। সমাবেশে সংগঠনের জেলা ও উপজেলার কয়েক হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS