উত্তরাঞ্চলের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে দিন দিন বেড়েই চলছে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা। কয়েক বছর আগে এমন ঘটনা কম শোনা গেলেও ঠাকুরগাঁওয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ এখন নিত্যদিনের কর্মযজ্ঞ।তালাকের কার্যক্রম করেই ব্যস্ত সময় পাড় করছেন স্থানীয় কাজীরা।
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক তথা পরকীয়া প্রেমের কারণে বিচ্ছেদ বেশি ঘটছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সমাজকর্মী ও সচেতনরা।
কোনো দম্পতির বিয়ের বয়স ৬ মাস, কারো ২ বছর আবার কারো ৫ বছরও পেরিয়েছে। অনেকের বিয়ের বয়স এক দশক পেরিয়ে হয়েছেন সন্তানের জনক-জননী। স্বামী-স্ত্রীর এমন সম্পর্ক শেষ হয়ে যাচ্ছে নিমিষেই।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিদিন গড়ে বিবাহ-বিচ্ছেদ হচ্ছে ৪টি। যার অন্যতম প্রধান কারণ পরকীয়া প্রেম। এছাড়াও সংসারে বনিবনা না হওয়া, প্রেম করে বিয়ে, যৌতুকসহ আরো বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
স্থানীয় সমাজকর্মী আবু মহিউদ্দিন বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ সমাজে একটি ব্যাধির মত। বিচ্ছেদ প্রতিকারের জন্য সচেতনতা জরুরি। বর্তমান সমাজে পরকীয়ার কারণেই বেশিরভাগ সম্পর্ক শেষ হয়ে যাচ্ছে। পরিবারের যে প্রয়োজনীয়তা এসব সম্পর্কে সমাজের সকলকে অবগত হতে হবে। আর বিবাহ বিচ্ছেদ কমানোর জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধ বৃদ্ধি করতে হবে।
স্থানীয় কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাকের জন্য অনেকগুলো কারণ থাকে। আমার মাধ্যমে গত ১ মাসে যতগুলো তালাক সম্পন্ন হয়েছে এর বেশির ভাগই মেয়ের পক্ষ হতে। ছেলের পক্ষ হতে বা উভয় পক্ষ হতে তালাক খুবই কম। আর মেয়ের পক্ষ হতে বিচ্ছেদের অনেক কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ পরকীয়া, বনিবনা না হওয়া, মেয়ের মা ও বোনের কুমন্ত্রণা, যৌতুকের জন্য নির্যাতন।
বর্তমানে ঠাকুরগাঁওয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ অনেক বেড়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করি বিচ্ছেদ না হয়ে যেন সংসারটা টিকে যায়। একটি বিচ্ছেদের আগে যেন কোনোভাবে সেটাকে আটকানো যায়, কিন্তু তারপরও তা সম্ভব হয় না। আর একটি বিচ্ছেদ ঘটলে অনেক মানুষকে সেটার কুফল ভোগ করতে হয়।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড জয়নাল আবেদীন বলেন, কোর্টে এখন যত বিচ্ছেদ আসছে তার মধ্যে মেয়ের পক্ষ হতে বেশি আসছে। সংসারে স্বামী-স্ত্রী মিল না হওয়ার কারণে তালাক হচ্ছে। তবে আমি মনে করি সংসারে সমস্যাগুলো সমাধান করে একে অপরের ভুলত্রুটি মেনে নিয়ে চলাই জীবন।
ঠাকুরগাঁও জেলা রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলায় মোট কাজী রয়েছেন ৬২ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত গত ৮ মাসে জেলায় বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে ১ হাজার ১০০টি। স্ত্রীর মাধ্যমে বিচ্ছেদ হয়েছে ৬০০টি, স্বামীর মাধ্যমে বিচ্ছেদ ঘটেছে ৩০০টি আর পারিবারিকভাবে বিচ্ছেদ হয়েছে ২০০টি।
জেলা সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার হেলাল উদ্দিন বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক সাধারণত তিন প্রকার। ছেলের পক্ষ হতে তালাক, মেয়ের পক্ষ হতে তালাক, উভয় পক্ষ হতে তালাক। এ বছরে মেয়ের পক্ষ থেকে তালাক বেশি হয়েছে। পারিবারিকভাবে তালাকের সংখ্যা খুবই কম।