দেশের ফুটবলের উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে আবির্ভাব হয়েছিল বসুন্ধরা কিংসের। যাত্রা শুরুর পর থেকেই একের পর এক সাফল্যে ক্লাবটি নিজেদের নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।দেশের একমাত্র ক্লাব হিসেবে টানা পাঁচ আসরে লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়েছে ক্লাবটি। জিতেছে ট্রেবল শিরোপাও।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ছড়িয়েছে কিংসের সুনাম। ফুটবলের কাঠামোগত উন্নয়নেও বসুন্ধরা কিংস অভূতপূর্ব অবদান রেখেছে। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র ক্লাব যাদের ফ্লাড লাইট সহ আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম রয়েছে। মিলেছে ফিফার অনুমোদনও। দেশের ফুটবলের উন্নয়নের স্বার্থে এবার যাত্রা শুরু করলো বসুন্ধরা কিংস ফুটবল একাডেমি।
একজন ভালো ফুটবলার গড়ে তুলতে হলে ছোট বয়স থেকেই উন্নত মানের অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। বসুন্ধরা কিংস দেশের ফুটবলের সবচেয়ে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন ক্লাব। এবার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যাত্রা শুরু করলো কিংস একাডেমি। এই একাডেমির মাধ্যমে ৬-১২, ১১-১৫ এবং ১৫-১৮ বছর বয়সি তরুণ খেলোয়াড়রা প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন।
ফুটবলবিশ্বে বসুন্ধরার অনন্য সাফল্যের পর, এই উদ্যোগটি দেশের ফুটবলের ভবিষ্যৎকে শক্তিশালী করবে। একাডেমির লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিভাবান যুবাদের আবিষ্কার এবং ফুটবলে তাদের দক্ষতা উন্নয়ন করা। বসুন্ধরা কিংসের এই নতুন উদ্যোগে দেশের ফুটবল উপকৃত হবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এই ব্যাপারে ক্লাবের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। আমার ব্যাক্তিগত মতামত হচ্ছে বাংলাদেশে যতগুলো খেলা আছে তাদের সবগুলোর জনপ্রিয়তা এক করলেও ফুটবলের সমান হবে না। এই জনপ্রিয়তাটা আসলে আমরা যারা বাফুফের দায়িত্বে আছি বা ক্লাবের দায়িত্বে আছি তারা ক্যাশ করতে পারিনি। এটা আমাদেরই ব্যর্থতা। ফুটবলে গনজাগরণ তৈরি করতে হলে জাতীয় দলের সাফল্য অপরিহার্য। সেক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে ছিলাম। এর একটা কারণ হচ্ছে জাতীয় দলের পাইপলাইন সমৃদ্ধ না। আর ক্লাবের পাইপলাইনও সমৃদ্ধ না। ক্লাবের ফুটবলারদের নিয়েই সাধারনত জাতীয় দল গঠন করা হয়ে থাকে। এই যায়গাটা নিয়ে কাজ করতে গেলে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দল নিয়ে কাজ করা জরুরী হয়ে পড়ে। ’
‘আমাদের চিন্তা ভাবনা শুরু থেকেই ছিল। আমরা এখন প্রাথমিকভাবে ৬ বছর বয়স থেকে শুরু করছি। যদিও আমরা এখনও এটাকে পূর্ণাঙ্গ একাডেমি বলতে চাচ্ছি না। কারণ এটা এখনও অনাবাসিক। আমাদের ক্লাব বিল্ডিংয়ের কাজ চলছে। এটা শেষ হলেই আমরা আবাসিক ভাবে শুরু করবো। তখন আমরা এটাকে পূর্ণাঙ্গ একাডেমি বলবো। ’
ফুটবল অন্যান্য খেলাধুলার তুলনায় উপার্জনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি লাভজনক, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক স্তরে। তবে সফল হওয়ার জন্য ছোটবেলা থেকেই উন্নত প্রশিক্ষণ ও সুযোগ সুবিধা অপরিহার্য। বর্তমান সময়ে, ক্লাবগুলো যদি পর্যাপ্ত একাডেমি এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে, তাহলে তরুণ খেলোয়াড়রা তাদের প্রতিভা বিকাশে সফল হতে পারে। বসুন্ধরা কিংসের বিদেশি দক্ষ কোচ, আধুনিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সঠিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করে, বাংলাদেশের তরুণ খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ পাবে। এই লক্ষ্য নিয়েই যাত্রা শুরু করেছে বসুন্ধরা কিংস একাডেমি।
একাডেমির ফুটবলাররা আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন, যা দেশের অন্যান্য ক্লাবের তুলনায় একেবারেই ভিন্ন। স্থানীয় কোচিং প্যানেলের পাশাপাশি রোমানিয়ান কোচ ভ্যালেরিউ তিতার অধীনে আধুনিক ফুটবল পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ থাকবে। বসুন্ধরা কিংসের এই একাডেমি, দেশের একমাত্র ক্লাব হিসেবে আন্তর্জাতিক মানের মাঠে অনুশীলনের সুবিধা প্রদান করবে। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে খেলোয়াড়দের মান উন্নয়নে কাজ করবে বসুন্ধরা কিংসের এই একাডেমি।
ফলে তরুণ খেলোয়াড়রা কেবল নিজেদের দক্ষতা উন্নয়নই করবে না, বরং আন্তর্জাতিক ক্লাবের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে একটি নতুন দিগন্ত খুলবে। একাডেমির খেলোয়াড়রা দেশের শীর্ষ খেলোয়াড়দের সঙ্গে অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা আরও বাড়াতে পারবেন। ক্লাবটির এই উদ্যোগ দেশের ফুটবলে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে, যা আগামী দিনে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক হবে।
এই একাডেমি দীর্ঘ মেয়াদে সুফল বয়ে আনবে বলে বিশ্বাস করেন ইমরুল হাসান। তিনি বলেন, ‘এখন যে একাডেমিটা শুরু হচ্ছে, কয়েক বছর পরে এটার সুফল আমরা বসুন্ধরা কিংস এবং জাতীয় দল পেতে শুরু করবে। এখন এটা সবার জন্যই উন্মুক্ত। সকলেই এখানে ভর্তি হয়ে অনুশীলন করতে পারবে। যারা এখানে ভালো করবে তাদের আলাদা করে পরিচর্যার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী ছয়-সাত বছর পর এর সুফল আমরা দেখতে পাবো। ’