সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ (সর্বাত্মক অবরোধ) কর্মসূচি ঘিরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীজুড়ে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের সংঘর্ষ ও গুলিতে রাজধানীতে এক সাংবাদিকসহ অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। আন্দোলনকারী, পুলিশ, সাংবাদিক, পথচারীসহ আহত হয়েছেন কয়েক শ। আতঙ্ক, উত্তেজনা ও উদ্বেগের মধ্যে এদিন রাজধানী ঢাকা ছিল কার্যত অচল।
গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ রাজধানীতে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের বিক্ষোভ দমাতে বিভিন্ন স্থানে প্রস্তুতি নিয়ে ছিলেন বিজিবি, পুলিশ ও র্যাবের বিপুলসংখ্যক সদস্য। লাঠিসোঁটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অনেক জায়গায় ছিলেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও।
রাজধানীর উত্তরা, মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, ধানমন্ডি, মিরপুর, নীলক্ষেত, তেজগাঁও, শান্তিনগর, মহাখালী, শনির আখড়া, কাজলা, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। দিনভর এসব এলাকা ছিল রণক্ষেত্রের মতো। রামপুরায় হামলা হয় রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন বিটিভির কার্যালয়ে। মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের কার্যালয়সহ কয়েকটি পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। আগুন দেওয়া হয় বনানীর সেতু ভবনের সামনে থাকা বেশ কিছু গাড়িতে। আগের দিন আগুন দেওয়া হয়েছিল যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজায়। গতকাল সন্ধ্যার সময়ও বিভিন্ন জায়গায় ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। রাত আটটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কয়েকটি এলাকায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চলছিল।
গতকাল সারা দেশে নিহত হয়েছেন অন্তত ২৭ জন। এর মধ্যে রাজধানীর উত্তরায় ১১ জন, শনির আখড়া–যাত্রাবাড়ী এলাকায় ৫ জন এবং ধানমন্ডি, রামপুরা ও আজিমপুরে একজন করে নিহত হন। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আহত হওয়া ১২০ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় আরও অনেকে চিকিৎসা নেন। ঢাকায় আহত হয়েছেন আনুমানিক পাঁচ শতাধিক।
এদিকে ডিএমপির মুখপাত্র ফারুক হোসেন জানিয়েছেন, বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষে দায়িত্বরত পুলিশের ৬০ সদস্য আহত হয়েছেন।
উচ্চ আদালতের এক রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ৫ জুন থেকে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়ায় তাঁদের লাগাতার আন্দোলন শুরু হয় ১ জুলাই থেকে। শুরুতে এই আন্দোলন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমিত থাকলেও ক্রমে তা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলন দমাতে বিভিন্ন জায়গায় হামলার পর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
গত বুধবার শিক্ষার্থীরা হল ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর ‘শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ-বিজিবি-র্যাব ও সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা এবং কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে’ বৃহস্পতিবার সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেন।
রাজধানীর উত্তরায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও র্যাবের সংঘর্ষে ১১ জন নিহত হন। সংঘর্ষ শুরু হয় গতকাল বেলা ১১টার পর থেকে। উত্তরার হাউস বিল্ডিং থেকে জসীমউদ্দীন পর্যন্ত পুরো এলাকা দিনভর ছিল রণক্ষেত্রের মতো। সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেখানে সংঘর্ষ চলছিল, আন্দোলনকারীরা উত্তরা পূর্ব থানা ঘেরাও করে রেখেছিলেন।
ধানমন্ডিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র নিহত হয়। নিহত ছাত্রের নাম ফারহান ফাইয়াজ রাতুল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় রাপা প্লাজার সামনে মূল সড়কে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। ধানমন্ডি এলাকার ছয়-সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভে অংশ নেন। বেলা ১১টার দিকে ওই শিক্ষার্থীদের প্রথমে ধাওয়া করেন মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি থানা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। একই সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এরপরই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়।
আসাদগেট, ধানমন্ডি ২৭, কলাবাগান, সায়েন্স ল্যাব ও নিউমার্কেট এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের চাপাতি, রামদা, হকিস্টিকসহ বিভিন্ন দেশি অস্ত্রসহ অবস্থান করতে দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীরা দেশি বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে মূল সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। তখন শিক্ষার্থীরা রাপা প্লাজা, লালমাটিয়া এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নেন। কয়েক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে দুপুরের দিকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকার পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
এই এলাকায় সংঘর্ষে আহত হয় রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী ফারহান। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মোহাম্মদপুর এলাকার সিটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তার শরীরে রাবার বুলেটের ক্ষত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবরে আরও অনেক শিক্ষার্থী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন। সন্ধ্যায় ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে পুলিশ ও সরকার–সমর্থকদের সঙ্গে আবার পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ধানমন্ডি এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।
সায়েন্স ল্যাব এলাকাতেও দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়।
রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) প্রধান কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা তিনটার পর শতাধিক ব্যক্তি প্রধান ফটক ভেঙে বিটিভি কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়েন। এ সময় প্রধান ফটকের বাইরে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন তাঁরা। তখন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা মালিবাগ মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেন। তাঁরা কিছুক্ষণ পরপর বিক্ষোভকারীদের দিকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ছিলেন। পরে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা বিটিভি ভবনের সামনে এসে অভিযান শুরু করেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার বিটিভি কার্যালয়ের ওপর দিয়ে টহল দেয়। এর প্রায় ১৫ মিনিট পর র্যাবের একটি হেলিকপ্টারও টহল দেয় সেখানে।
সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে বিটিভির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বলা হয়, ‘বিটিভিতে ভয়াবহ আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত সহযোগিতা কামনা করছি। ভেতরে আটকা পড়েছে অনেকে।’
রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিটিভির সম্প্রচার বন্ধ ছিল।
এর আগে দুপুরে রামপুরা ব্রিজের পাশে ট্রাফিকের সহকারী পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা। এ সময় আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার প্রবেশদ্বারে একটি পুলিশ ফাঁড়ির ফটকে থাকা তিনটি মোটরসাইকেলেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সংঘর্ষের মধ্যে রামপুরা এলাকায় এক পথচারীর মৃত্যু হয়। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
যাত্রাবাড়ীতে বুধবার থেকে দুই দিন ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে। যাত্রাবাড়ীর কাজলা থেকে শনির আখড়া হয়ে সাইনবোর্ড এলাকা পর্যন্ত সড়ক দখলে নিয়ে বিক্ষোভ চলে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো সংঘর্ষ শুরু হয়। দিনভর থেমে থেমে চলে এই সংঘর্ষ। কখনো পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরক্ষণেই আবার বিক্ষোভকারীরা একত্র হয়ে ইটপাটকেল ছুড়তে ছুড়তে পুলিশ সদস্যদের ধাওয়া দিয়ে পিছু হটান। রাত পৌনে নয়টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই এলাকায় সংঘাত চলছিল।
চিকিৎসকেরা জানান, এই এলাকা থেকে পাঁচজনের মরদেহ নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পারলেও গতকাল দুপুরে পার্শ্ববর্তী নীলক্ষেত মোড়ে জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা দুইটার পর থেকে নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে কিছুটা দূরত্বে ব্যারিকেড দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশ। তবে বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে হঠাৎ করে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হন পুলিশ সদস্যরা। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংর্ঘষ শুরু হয়। পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। আন্দোলনকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। পুলিশের বাধার মুখে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ ঢাকা কলেজের দিকে, আরেকটি অংশ আজিমপুর নিউ পল্টন এলাকার দিকে ছড়িয়ে পড়ে। রাত সাড়ে আটটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আজিমপুর এলাকায় সংঘর্ষ চলছিল। এই এলাকায় সংঘর্ষে মোহাম্মদ (২০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। রাতে তাঁর মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
মেরুল বাড্ডা এলাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার পর অবস্থান নেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বেলা পৌনে ১১টার দিকে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের ধাওয়ার মুখে একপর্যায়ে পুলিশ কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে যায়। বাইরে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন। সেখানে বেশ কয়েকটি দোকানপাট, স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হয়।
বেলা একটার আগে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে আন্দোলনকারীদের দিকে রাবার বুলেট ও ছররা গুলি ছোড়ে। এ সময় শিক্ষার্থীসহ অনেকে আহত হয়েছেন। পরে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভেতরে থাকা পুলিশদের উদ্ধারে দুটি হেলিকপ্টার আসতে দেখা গেছে। একটি হেলিকপ্টারে কয়েকজন পুলিশকে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাইটিঙ্গেল মোড়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পরে শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে সরে শান্তিনগর মোড়ে এসে জড়ো হন।
বেলা একটা থেকে শান্তিনগর মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। হামলাকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শান্তিনগর মোড় থেকে পূর্ব দিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পাশ থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছেন। এ সময় ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজনের হাতে পিস্তল দেখা গেছে। এ ঘটনার পর ওই এলাকায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। ওই এলাকায় দুই শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন। রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলছিল।
সকাল থেকে দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় মিরপুর এলাকায়। সকাল ১০টার দিকে মিরপুর টোলারবাগে ডেল্টা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এলাকার সড়কে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। এর এক ঘণ্টা পর মিরপুর-১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। ওই সময়ও পুলিশ তাঁদের ধাওয়া দিয়ে মিরপুর ডিওএইচএস এলাকার ভেতরে পাঠিয়ে দেয়। আন্দোলনকারীরা জানান, সেখানে পুলিশ ও যুবলীগের সদস্যরা তাঁদের পিটিয়েছেন।
দুপুর সোয়া ১২টার পরে আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরের পশ্চিম পাশে পুলিশকে লক্ষ্য করে আন্দোলনকারীদের ইটপাটকেল ছুড়তে দেখা যায়। জবাবে পুলিশও সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। তখন মিরপুর ও এর আশপাশের এলাকায় সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
বেলা একটার দিকে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা গোলচত্বরে অবস্থান নেন। আর আন্দোলনকারীদের অবস্থান ছিল গোলচত্বর থেকে কাজীপাড়ার দিকে আসতে আল-হেলাল হাসপাতালের সামনে। আন্দোলনকারীদের আরেকটি অংশের অবস্থান ছিল মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের দিকে। পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। তবে একপর্যায়ে পুলিশ পিছু হটলে ১০ নম্বর গোলচত্বরে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ দেখান। এ সময় সেখানকার পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। সন্ধ্যায়ও এই এলাকায় বিক্ষোভ চলছিল।