আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব না; অসম্ভব। মুক্ত করার একমাত্র পথই হচ্ছে আইনি লড়াই।যে পথে তারা হাঁটে না।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু একাডেমি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
কামরুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায় হয়েছে কত সালে, কিন্তু এখনো তারা (বিএনপি) মুক্তির আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারেনি। এটা হচ্ছে তাদের একটা ভেলকিবাজি, মিথ্যা, ধোঁকা। তারা খালেদা জিয়াকে জেলখানায় রেখে তারেক রহমানকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। খালেদা জিয়াকে তারা মুক্ত করতে চায় না। মুক্তি সম্ভব একমাত্র আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে। কিন্তু তারা আদালতে যায় না।
আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব না মন্তব্য করে তিনি বলেন, আজকে তিনি (খালেদা জিয়া) প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় বাসায় বসবাস করছেন মুক্ত মানুষ হিসেবে। চিকিৎসা পাচ্ছেন, নেতাকর্মীরা দেখা করতে পারছেন। সবই করতে পারছেন। কিন্তু তারা (বিএনপি) খালেদা জিয়াকে আবার রাজনীতিতে আনবে, মুক্ত মানুষ হিসেবে রাজনীতিতে আনবে তার জন্য কোনো আইনি লড়াই তারা করে না, করার মতো কোনো মানসিকতাও তাদের নেই। কারণ তারা চায় তারেককে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করতে। এ কারণেই তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় না। এখনো তারা বলে যে আন্দোলন করবে। আন্দোলন করে তারা কী করবে? কোনো লাভ নেই। আইনি লড়াই ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি কোনো অবস্থাতেই সম্ভব না। আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব না; অসম্ভব। মুক্ত করার একমাত্র পথই হচ্ছে আইনি লড়াই। যে পথে তারা হাঁটে না।
তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে ক্ষমতায় যাবো এ নিশ্চয়তা পেলে নির্বাচনে যাবো আর এ নিশ্চয়তা না পেলে নির্বাচনে যাবো না এটা কোনো গণতান্ত্রিক দলের চরিত্র হতে পারে না। বিএনপির সেই চরিত্র, তাই তারা নির্বাচনে আসে না। বারবার নির্বাচনে না এসে আমাদের অপবাদ দেয়। কিন্তু আমরাতো চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক সংসদে শক্তিশালী অপজিশন গঠন করুক। কিংবা সরকার গঠন করুক, নির্বাচনের মাধ্যমে যাই হোক হবে। এটাইতো নিয়ম; কিন্তু তারা আসে না। তারা আন্দোলন করে, কিন্তু সফল হয়েছে তা বলা যাবে না। তারা আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করে, জ্বালাও পোড়াও করে। এটা কোনো আন্দোলন হতে পারে না। আমরাও তো আন্দোলন করেছি। কিন্তু তাদের মতো জ্বালাও পোড়াও করিনি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য বলেন, আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অনেকে ষড়যন্ত্র করছে, মিথ্যা গুজব রটাচ্ছে। বলছে যে, আমাদের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ। অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়েছে। কিন্তু আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা কিন্তু এখনো ভালো আছে। আমরা ভালো আছি। করোনা, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের পরও প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন।
মোহাম্মদ নাসিমের স্মৃতিচারণ করে কামরুল ইসলাম বলেন, নাসিম ভাই যে একজন বড় মাপের নেতা কিন্তু কর্মীদের সঙ্গে তার ভাবসাবে সেটা বোঝা যায় না। আর আমাদের সঙ্গে সম্পর্কতো ছিল অন্যরকম। একজন কর্মীবান্ধব নেতা ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। তাকে যখন ১৪ দলের দায়িত্ব দেওয়া হলো তিনি তখন ১৪ দলকে সক্রিয় করে তুলেছেন। ১/১১ এর সময় তাকে আটক করা হয়েছিল। তাকে অনেক নির্যাতনও করা হয়েছিল, কিন্তু নেত্রীর বিপক্ষে একটা কথাও বের করতে পারেনি। এ হচ্ছে মোহাম্মদ নাসিম।
বাবার স্মৃতিচারণ করে মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয় বলেন, চার বছর হয়ে গেছে আব্বা নেই, কিন্তু তার এলাকার মানুষ এখনো ভাবে যে আব্বা বেঁচে আছেন। আব্বাই এখনো তাদের নেতা। এটাই কিন্তু পাওয়া। আব্বার সঙ্গে নেতাকর্মীদের খুব আন্তরিক যোগাযোগ ছিল। তিনি সবসময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কানেক্টেড থাকতেন। আমরা শুক্রবার আসলে দেখেছি আব্বা অস্থির হয়ে থাকতেন তার কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে কথা বলতে। তখন যদি কেউ না আসতে পারতেন আব্বা তাকে ফোন দিয়ে খোঁজখবর নিতেন। এ যে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এটাই আব্বার থেকে শিক্ষণীয়।
বঙ্গবন্ধু একাডেমীর সভাপতি শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে ও প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব হুমায়ুন কবির মিজির সঞ্চালনায় এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শাহে আলম মুরাদ ও আওয়ামী লীগ নেতা এম এ করিম।