ফিলিস্তিনের গাজায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা দ্য ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রসের কার্যালয়ে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর মর্টারের গোলা আঘাত করেছে। এতে ওই কম্পাউন্ডে আশ্রিত নিরীহ ২২ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন।আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (২১ জুন) বিকেলে ভারী এসব গোলা রেড ক্রসের কর্মীদের আবাসন ও কার্যালয়ের পাশে এসে পড়ে। রেড ক্রসই এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানিয়েছে। খবর বিবিসির।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বেসামরিক নাগরিক ও মানবিক সংস্থার স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সব পক্ষেরই সতর্কতামূলক পদক্ষপ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও এই হামলা হলো।
অবশ্য আগ্রাসনবাদী ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্রের কার্যালয় বলেছে, তারা ওই এলাকায় হামলা চালিয়েছে বলে কোনো আলামত নেই, প্রাথমিক তদন্তে সেটাই দেখা যাচ্ছে। তারপরও ঘটনাটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
রেড ক্রসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলায় রেড ক্রস কার্যালয়ের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেসময় আমাদের কিছু ফিলিস্তিনি সহকর্মীসহ বাস্তচ্যুত শত শত বেসামরিক নাগরিক কার্যালয় কম্পাউন্ডে ছিলেন।
হামলার পরপরই হতাহতদের নিয়ে রেড ক্রস ফিল্ড হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবীদের ছোটাছুটি দেখা যায়। এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ২২ জনের মরদেহ এসেছে এবং ৪৫ জন আহত অবস্থায় ভর্তি হয়েছেন। আরও হতাহতের খবর আসছে।
মানবাধিকার সংস্থাটি এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিতে বলেছে, যেসব হামলা মানবতাবাদী ও বেসামরিক নাগরিকদের ঝুঁকিতে ফেলে, সেসব হামলার নিন্দা জানাই আমরা।
এদিকে এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে ভিন্ন তথ্য দিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, ইসরায়েলি এ হামলায় ২৫ জন নিহত ও ৫০ জন আহত হয়েছেন।
বছরের পর বছর ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করে হুইদী বসতি গড়ে তোলা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাস বহুদিন ধরে ক্ষুব্ধ ছিল। এর মধ্যে আল আকসা মসজিদসহ বিভিন্ন এলাকায় ফিলিস্তিনিদের হত্যা, চরম নির্যাতন ও দমন-পীড়নের জবাব দিতে গত বছরের ৭ অক্টোবর আকস্মিক ইসরায়েলে হামলা করে বসে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। এতে দেশটিতে এখন পর্যন্ত এক হাজার ২০০ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এছাড়া ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা।
ওই আক্রমণের জবাব দিতে গাজায় নির্বিচারে বিমান হামলা চালাতে থাকে ইসরায়েলি বাহিনী। বেসামরিক স্থাপনা, এমনকি হাসপাতাল ও আশ্রয় কেন্দ্রেও চলতে থাকে তাদের বোমা হামলা। এতে এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজার ৩৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে সাড়ে ১৪ হাজারই শিশু।
প্রথম দিকে হামাস ও ইসরায়েল কিছু দিনের জন্য যুদ্ধবিরতিতে গেলেও এখন ‘শর্ত’কে অজুহাত বানিয়ে থামতে চাইছে না ইসরায়েল। গাজায় তাদের নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ-সমাবেশ চলছে।