রাজশাহীর বাঘায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। একই স্থানে দুই পক্ষের ভিন্ন কর্মসূচি ডাকার পর এই সংঘর্ষ হয়েছে।
শনিবার (২২ জুন) বেলা পৌনে ১১টার দিকে উপজেলা চত্বরে প্রথমে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এরপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
পরে পুলিশ লাঠি নিয়ে ধাওয়া দেয় এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এই ঘটনার পর উপজেলা চত্বরে পুলিশ মোতায়েন করা হলেও সেখানে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দীন এবং পৌর মেয়র আক্কাস আলী গ্ৰুপের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এর জের ধরেই আজকের সংঘর্ষের সূত্রপাত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল, বাঘা পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আক্কাস আলী, আড়ানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান শফি, আব্দুল খালেক, জার্মান আলীসহ অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত আশরাফুল ইসলাম বাবুল ও রফিকুল ইসলামকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাঘা উপজেলার সদর পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে তার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ। স্থান ছিল উপজেলা চত্বর। অপর পক্ষ একই স্থানে সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কতিপয় ব্যক্তি দলিল লেখক সমিতির নামে ক্রেতার কাছে জোরপূর্বক অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ডাক দেয়।
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আগে থেকে এখানে শক্তি প্রদর্শনের মহড়া চালানোর অঘোষিত প্রচারণা ছিল। এর মধ্যে সকালে দুই পক্ষ উপজেলা চত্বরে মুখোমুখি হয়। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
রাজশাহীর বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা প্রথমে লাঠি নিয়ে উভয় পক্ষকে ধাওয়া দেন। এতে তারা নিবৃত্ত না হওয়ার পুলিশ টিয়ার শেল ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে ঘটনার পর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এই ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম জানান, এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আর শনিবার সকালের এই সংঘর্ষের ঘটনার পর এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. রফিকুল আলম জানান, বাঘায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে।