পবিত্র ঈদুল আজহায় প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে বাড়ি ফিরছে মানুষ। রাজধানীর সদরঘাটে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ বেড়েছে। ঈদের আগমুহূর্তের ভিড় আর দুর্ভোগ এড়াতে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই ঢাকা ছাড়ছেন অসংখ্য মানুষ।
শুক্রবার (১৪ জুন) সন্ধ্যার দিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি লঞ্চই যাত্রী বোঝাই। কোনও লঞ্চেই কেবিন খালি নেই। ডেকেও দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়। একদিকে অল্প খরচে যাতায়াতের জন্য ডেকে জায়গা পেতে আগেভাগেই লঞ্চে ভিড় করছেন যাত্রীরা। অন্যদিকে যাত্রী বোঝাইয়ের পরেও আরও বেশি যাত্রী ওঠানোর জন্য হাঁকডাক দিচ্ছেন লঞ্চ শ্রমিকরা। সন্ধ্যায় প্রায় প্রতিটি লঞ্চকেই অতিরিক্ত যাত্রী নিতে দেখা যায়।
পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এদিন নদীপথে ঢাকা ছাড়ছেন হাজার হাজার মানুষ। বিশেষ করে চাঁদপুর, বরিশাল ও ভোলা রুটে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের আওতায় এবার সদরঘাট টার্মিনাল থেকে মোট ১৮০টি লঞ্চ ছাড়বে। এসব নৌপরিবহনের মধ্যে ঢাকা থেকে ছাড়বে ৯০টি, বিভিন্ন স্থান থেকে ৯০টি ঢাকায় আসবে।
লঞ্চের নিচ তলায় টেবিল চেয়ারে বসে টিকিট বিক্রি করছিলেন মানিক-১ লঞ্চের রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, মোটামুটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই ঘাটে চাপ একটু বেড়েছে। তবে আমরা যাত্রীদের যে পরিমাণ ভিড় আশা করেছিলাম তা এখনও হয়নি। গত ঈদের তুলনায় ভিড় কম। আগে এক সময় ডেক যেমন কানায় কানায় ভরে যেত সেটা এখন হচ্ছে না।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বরিশালগামী যাত্রী বিল্লাল হোসেন বলেন, আমাদের জন্য তো এখন সড়ক, নৌপথ দুটোই খোলা। যেখান দিয়ে সুবিধা সেখান দিয়ে যাওয়া যায়। তবে আমি নৌপথে চলাচল করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। সড়ক দিয়ে বরিশাল যাওয়া সহজ এবং নৌপথের চেয়ে অনেক কম সময় লাগে। তবু লঞ্চ টার্মিনালে এত ভিড় দেখে বোঝার উপায় নেই যে সড়ক দিয়ে বরিশালে খুব সহজে যাওয়া যায়। পদ্মা সেতু হওয়ার আগে ঈদকেন্দ্রিক লঞ্চে যে চাপ ছিল সেটা অবশ্য এখন নেই। এ কারণে আমরা আরামে যাত্রা উপভোগ করতে পারছি।
জোরে জোরে হাঁক ডেকে লঞ্চে যাত্রী নিচ্ছিলেন ঢাকা-হুলারহাট-ভান্ডারিয়াগামী লঞ্চ এমভি যুবরাজ-৭ লঞ্চের স্টাফরা। শরিফুল ইসলাম নামের এক কর্মী বলেন, ঈদে যাত্রী বেশি হয়। আমাদের মূল যে বেতন তার চেয়ে আমরা টিপস বেশি পাই। এ জন্য ঈদে বাড়ি যেতে না পারলেও বাড়তি ইনকামে বেশ খুশি খুশি লাগে।
এ ছাড়া বিভিন্ন লঞ্চ হতে আরও কয়েকজন যাত্রীর সাথে কথা বললে তারা লঞ্চের ডেকের ভাড়া নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও কেবিনের ভাড়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে তানভীর ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ডেকের ভাড়া স্বাভাবিক সময়ের মতোই রাখা হচ্ছে তবে কিছু কিছু লঞ্চের কেবিন ভাড়া একটু বেশি রাখা হচ্ছে।
ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌপুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছেন। সদরঘাট নৌ-পুলিশ থানার ওসি মো. আবুল কালাম গণমাধ্যমকে বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে প্রতিটি লঞ্চ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। কোনও লঞ্চে যেন অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই না করে সেজন্য আমরা সতর্ক করেছি।
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা নদী বন্দর নৌযান চলাচল ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক মো. মামুন-অর-রশিদ বলেন, ঈদ কেন্দ্রিক ভিড় একদম কম। গত কোরবানির ঈদে যে যাত্রী ছিল সে তুলনায় এ কোরবানির ঈদে যাত্রী অনেক কম। দিন যত যাচ্ছে ঘাটে যাত্রী কমছে। গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত একটি ওভারব্রিজ ও মেট্রোরেল চালু হলে যাত্রী বাড়বে। সদরঘাট ও লঞ্চ ব্যবসাকে বাঁচাতে হলে এটি প্রয়োজন।