বিদ্যুতের দাম বাড়ার ঘোষণায় চরম বিপাকে নওগাঁর চালকল ব্যবসায়ীরা। মিলগুলো বিদ্যুৎ নির্ভর হওয়ায় বাড়বে উৎপাদন খরচ।ফলে প্রভাব পড়বে ধান-চালেও।
নওগাঁ জেলাজুড়ে অটোমেটিক রাইস মিল এবং হাসকিং মিল মিলিয়ে চালকল রয়েছে প্রায় ১২শর মতো। তবে বর্তমানে সচল রয়েছে প্রায় সাড়ে ৭শ মিল। এই মিলগুলো থেকে প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে প্রায় লাখ টন চাল। যার পুরোটাই নির্ভর করতে হচ্ছে বিদ্যুতের ওপর। বর্তমানে বিদ্যুতের দাম বাড়ার প্রভাবে চাল উৎপাদনে খরচ বাড়বে বলছেন মিল মালিকরা।
নওগাঁ তছিরন অটোমেটিক রাইস মিলের মালিক তৌফিকুর রহমান বাবু বাংলানিউজকে জানান, নওগাঁয় গ্যাসের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে সব মিলকারখানা বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। এজন্য বিদ্যুতের দাম বাড়লে অটোমেটিক ভাবেই তার প্রভাব পড়ে উৎপাদন খরচে। যেহেতু বিদ্যুতের দাম বেড়েছে এর জন্য চালের দামও কিছুটা বাড়বে। তবে সরকারকে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ভাবতে হবে। অন্তত পক্ষে মিলকারখানাগুলোকে নিয়ে ভাবতে হবে। সরকার সবদিক বিবেচনা করে মিলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে বিদ্যুতের দাম বাড়ালে চালের খরচ কিছুটা কমতে পারে।
নওগাঁ চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. ফরহাদ হোসেন চকদার জানান, দিন দিন বাড়ছে শ্রমিকের মজুরি। একটি মিল চালাতে গেলে প্রতিনিয়তই আনুষঙ্গিক নানা খরচ বেড়ে চলছে। এর ওপর আবার বিদ্যুতের দাম বাড়তি। সব মিলিয়ে চালের দাম সমন্বয় করা খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে। যেহেতু সামনে রমজান সরকার বা মিল মালিকরা কখনোই চাইবে না চালের দাম বাড়ুক। কিন্তু বিদ্যুতের দাম বাড়ায় আলটিমেটলি চালের উৎপাদন খরচ বাড়বে। এক্ষেত্রে মিল মালিকদের করার কিছুই নেই। এই মুহূর্তে সরকার যদি বিদ্যুৎ বিলের বিষয়টি মিল মালিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে তাহলে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যাবে। মিল মালিকরা আশা করে সরকার এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন।
এমন পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় উত্তরাঞ্চলের কৃষকরাও। চাষাবাদে শ্রমিক, সার, কীটনাশক ছাড়াও বাড়তি খরচ যোগ হবে বিদ্যুতের। আগে চাষিদের অভিযোগ, দিন দিন খরচ বাড়ছে চাষাবাদে। কিন্তু খরচের তুলনায় বাড়ছে না ফসলের দাম।
নওগাঁ সদর উপজেলার বাইপাস এলাকার কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, গেল বছর এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে খরচ হয়েছে ১২শ টাকা। কিন্তু এখন দিতে হবে ১৮শ টাকা। শুধু কি বিদ্যুতের দাম, গেল বছরের তুলনায় খরচ বেড়েছে সবকিছুতেই। দিন দিন চাষাবাদ করা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, এ বছর জেলায় বোরোর আবাদ হয়েছে প্রায় ২ লাখ হেক্টর জমিতে। তবে সেচের বিষয়ে সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক পদ্ধতিতে ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের। চাষাবাদে সেচের পানি কম ব্যবহারে কীভাবে চাষাবাদ করা যায় সেই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে করে কৃষক অল্প পানিতেই চাষ করতে পারবে।