সরকারি একটি কালভার্ট নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু এর এক পাশে রাস্তা আছে, অন্য পাশে নেই।আর কাজ পুরোপুরি শেষ না হলেও এরই মধ্যে বিল হয়ে গেছে।
এ চিত্র লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের রতনপুর এলাকার।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য (মেম্বার) ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান রাজু নিজের স্বার্থে একটি ছোট খালের ওপর কাবিটা কর্মসূচির আওতায় কালভার্টটি বরাদ্দ নিয়েছেন। যার ব্যয় ধরা হয় পাঁচ লাখ টাকা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কালভার্ট না থাকলেও প্রভাব খাটিয় জনমানবহীন এলাকায় কালভার্ট বরাদ্দ নিয়েছেন এ আওয়ামী লীগ নেতা। ভবিষ্যতে সেখানে বাড়ি নির্মাণ করবেন।
রাস্তা ছাড়া কালভার্ট তৈরির কারণ জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান রাজু সাংবাদিকদের বলেন, কাজের আগেই আমি বিল পেয়ে গেছি। পিআইও আমাকে বিল দিয়ে দিয়েছেন। নিউজ করে কোনো লাভ নেই।
মান্দারী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের রতনপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা ছাড়াই খালি স্থানে কালভার্ট বানানোর কাজ প্রায় শেষ। এর এক পাশে মান্দারী-দত্তপাড়া সড়ক থাকলেও অন্য পাশে বিশাল ক্ষেত। এ কালভার্টটি জনস্বার্থে ব্যবহারেরও সুযোগ নেই। কালভার্টের বিপরীত পাশের খালি জমিতে বাড়ি করার জন্য সীমানা দিয়ে রেখেছেন ইউপি সদস্য রাজু।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয় তিনজন জানান, ইউপি সদস্য রাজুর এলাকা রতনপুর গ্রামের অনেক স্থানে বাঁশের সাঁকো দিয়ে জলাশয় পার হন জনসাধারণ। কিন্তু তার সেদিকে লক্ষ্য নেই। তিনি সেখানেই একটি কালভার্ট করেছেন, যেখানে তার জমি রয়েছে। সেখানে তিনি বাড়ি করবেন। এজন্যই তিনি সরকারি বরাদ্দের টাকায় একটি কালভার্ট নির্মাণ করেছেন। জনসাধারণ কখনোই এটি ব্যবহার করতে পারবেন না। ব্যক্তিগত স্বার্থেই রাজু কালভার্টটি করেছেন।
সংশ্লিষ্ট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শাহজাহান কামালের বরাদ্দে উন্নয়নমূলক কাজের চিঠি ইস্যু করা হয়। এটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় প্রথম কিস্তির প্রকল্প ছিল। ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর কর্তৃক স্মারক দেওয়া হয়। ওই তালিকার ২৯ নম্বরে মান্দারী স্কুল রোডে হারুনের বাড়ির পাশে ব্রিজ নির্মাণে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে ১৪ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন স্বাক্ষর করেন।
আওয়ামী লীগ নেতা ও মান্দারী ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাহবুবুর রহমান রাজু আরও বলেন, ‘আমিতো কাজ করেছি। অনেকে কাজ না করেই বিল তুলে নিয়ে যান। তাদের নিয়ে কোনো সংবাদ হয় না। এখন আমারটা নিয়ে মাতামাতি কেন?’
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সদর উপজেলা কার্যালয়ের সামনে ক্ষিপ্ত হয়ে জনসম্মুখে ইউপি সদস্য রাজু সাংবাদিকদের বলেন, ‘কাজের আগেই আমি বিল পেয়ে গেছি। পিআইও আমাকে বিল দিয়ে দিয়েছেন। নিউজ করে কোনো লাভ নেই।
সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোশারফ হোসেন বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি, কালভার্টটির প্রকল্প পরিবর্তন করার জন্য। কিন্তু বরাদ্দটি সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শাহজাহান কামালের ছিল। তিনি মারা গেছেন। তার স্বাক্ষর ছাড়া পরিবর্তনের সুযোগ নেই। আর কাজ না করে বিল নেওয়ারও সুযোগ নেই।