নতুন জাতীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি ও রাজনৈতিক কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) হাসানুল হক ইনু।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে জাসদের জাতীয় কমিটির দুই দিনব্যাপী সভার প্রারম্ভিক ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপি-জামাত এবং তাদের দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক সঙ্গীদের তীব্র বাধার মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য একটি বিরাট রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনে কিছু আসনে রিটার্নিং অফিসার, ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি, বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কর্মকর্তাদের পক্ষপাতিত্বমূলক ভূমিকা পালন করে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিকে জিতিয়ে আনার ঘটনা ঘটেছে। তবুও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের সংবিধান সমুন্নত থেকেছে এবং দেশকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা মধ্যে ফেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত পরাজিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে আসন এবং শরিকদের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দাঁড় করিয়ে তাদের জিতিয়ে আনার জন্য আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরের শক্তিশালী চক্র ও প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার ন্যক্কারজনক নগ্ন ভূমিকাও পরিলক্ষিত হয়েছে।
জাসদ সভাপতি বলেন, বর্তমানে রাষ্ট্র-রাজনীতি-সমাজ-অর্থনীতিতে লুটেরা দুর্নীতিবাজ মাফিয়া সিন্ডিকেটের ব্যাপক দাপট পরিলক্ষিত হচ্ছে, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে লুটেরা মাফিয়া-সিন্ডিকেট। রাজনীতি ও সমাজে কালো টাকা ও পেশিশক্তির দাপট বেড়েই চলেছে। রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র ও জ্ঞাতি সম্পর্কেও প্রভাব বেড়েছে। গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবিদার রাজনৈতিক দলগুলোও সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা, সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক ক্ষমতার ছাতার নিচ থেকে লুটেরা-দুর্নীতিবাজদের বের করে দেওয়া, নিত্যপণ্যের বাজারের ওপর থেকে সিন্ডিকেটের প্রভাব ধ্বংস করা, আইনের শাসন ও সুশাসন নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের রাশ টেনে ধরা, জাতীয় প্রধান কর্তব্য হিসাবে হাজির হয়েছে। দেশ পরিচালনা ও শাসন-প্রশাসনে জনগণের অংশগ্রহণ-ক্ষমতায়নের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নতুন জাতীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি ও কর্মকৌশল প্রণয়ন করাই সব দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তির কর্তব্য।
হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, কার্যকরী সভাপতি রবিউল আলম, সহ-সভাপতিরা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মণ্ডলী, সব সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বিশেষ আমন্ত্রণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলীয় প্রার্থীরা যোগ দেন।
সভার শুরুতেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জাসদের দলীয় প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী অভিজ্ঞতা ওপর বক্তব্য দিয়েছেন। এরপর জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা বক্তব্য দেন।
সভার শুরুতে প্রয়াত দলীয় নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মৃত্যুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আজকের সভা রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে, শনিবার সকাল ১০টায় শুরু হয়ে রাত ৮টায় শেষ হবে।