ইদানীং ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের মধ্যে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের (স্ট্রোক) প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। অতিরিক্ত চিন্তা, দুশ্চিন্তা, হতাশা, মারাত্মক কাজের চাপ, অনাকাঙ্ক্ষিত নানা খবরের কারণে এ বয়সীদের মধ্যে এ রোগ দেখা দিচ্ছে।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে অকালে ঝরে যেতে পারে বহু প্রাণ। কিন্তু সঠিক উপায়ে শরীরের যত্ন ও কয়েকটি নিয়ম পালন করলে স্ট্রোক থেকে দূরে থাকা যায়। চলুন জেনে আসি এ রোগ থেকে দূরে থাকতে কি কি করতে হবে।
পশ্চিমবাংলার এইচ পি ঘোষ হাসপাতালের কনসালট্যান্ট নিউরোলজিস্ট ডা. অম্লান দত্ত ও পারমিতা পাল স্ট্রোক থেকে রক্ষা পেতে বেশ কয়েকটি উপায় বের করেছেন। তার আগে আমাদের জানা উচিৎ স্ট্রোক কি?
স্ট্রোক সাধারণত দুই ধরনের। একটি, ইস্কেমিক স্ট্রোক (ধমনির ভেতরে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে, মস্তিষ্কে রক্ত যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, ফলে সেই অংশটি মরে যায়), হ্যামারেজ স্ট্রোক (ধমনি ছিঁড়ে গিয়ে শরীরের ভেতরেই রক্তক্ষরণ হওয়া)। কোন ধরনের স্ট্রোক হয়েছে, তা বুঝতে প্রথমেই সিটি স্ক্যান করতে হয়। এর ওপর ভিত্তি করেই আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা শুরু হয়। কারণ, দুটি স্ট্রোকের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পূর্ণ আলাদা।
অতিরিক্ত চিন্তা, দুশ্চিন্তা, হতাশা, মারাত্মক কাজের চাপ, অনাকাঙ্ক্ষিত নানা খবর ছাড়াও শারীরিক কসরত, না হাঁটা, বেশিক্ষণ বসে থাকা, স্বাস্থ্যকর খাবারের বদলে অনেক বেশি ফাস্ট ফুড বা জাঙ্ক ফুড নির্ভর হয়ে পড়া, সঠিক সময়ে খাবার না খাওয়া, পর্যাপ্ত সময় না ঘুমানোর কারণেও স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় মানুষ। তা ছাড়া বাড়তে থাকা মানসিক চাপ, অনিয়ন্ত্রিত ধূমপান, মদ্যপান ও জিনগত কারণে কমবয়সীদের মধ্যে স্ট্রোকের প্রবণতা বাড়ছে।
এসব কারণে রক্তবাহের ভেতরের দেয়ালে কোলেস্টরল বা চর্বি জমে ধমনি সরু করে দেয়। যাকে মেডিকেলের পরিভাষায় বলা হয়, অ্যাক্রোস্কেলোরসিস। ইউরোপ, আমেরিকার বাসিন্দাদের মধ্যে এই প্রবণতা সাধারণত ৩৫ বছরের পর দেখা যায়। কিন্তু দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে ২৫ বছরের পরই এ প্রবণতা তৈরি হয়।
সাধারণত কোনো ইঙ্গিত দিয়ে স্ট্রোক হয় না। কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছে কিনা সেটি বোঝার কয়েকটি লক্ষণ রয়েছে। যেমন- দেহের ভারসাম্যে সমস্যা। হাঁটতে গিয়ে টলে পড়ে যাওয়া। শরীর একদিকে বেঁকে যাওয়া; হঠাৎ করে চোখে অন্ধকারের পর্দা নেমে আসে। একটা জিনিসকে দুটি দেখা; মুখ একদিকে ঝুলে পড়া বা বেঁকে যাওয়া; হঠাৎ হাত অসাড় লাগা, জিনিস পড়ে যাওয়া, হাতে জোর না পাওয়া; কথা জড়িয়ে যাওয়া বা কথা আওড়ে যাওয়া। এসবের কোনো একটি দেখা দিলে ভুক্তভোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
এসব উপসর্গের একটিও দেখা দিলে সেটি হালকাভাবে না নেওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া গ্যাসের উপসর্গ বলে এড়িয়ে যাওয়া; দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাওয়া; মুখে-চোখে পানি দেওয়ার চেষ্টা না করাই মহা উত্তম।
স্ট্রোক হলে সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। যদি সময় লেগে যায় সে ক্ষেত্রে রোগীকে মাটিতে শুইয়ে, মাথাটা উঁচু করে রাখতে হবে। গলার কাছে চাপা পোশাক থাকলে তা আলগা করে দিতে হবে। আক্রান্ত হওয়ার সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে থ্রম্বোসিস প্রক্রিয়ায় চিকিৎসা শুরু করে দিতে হবে।
চিকিৎসকরা বলেন, স্ট্রোক এড়াতে নিয়মিত শারীরিক কসরত করতে হবে। নিয়ম মেনে খাওয়া-ঘুমাতে হবে। ফাস্ট ফুড, ধূমপান, মদ্যপান এড়িয়ে চলা অত্যাবশ্যকীয়। তা ছাড়া মানসিক চাপ এড়াতে কাজ থেকে দুই তিন মাসের জন্য বিরতি নেওয়া জরুরি।
পরিবারের কারও স্ট্রোকের ইতিহাস থাকলে ২৫ বছর বয়সের পর থেকে নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার। ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়লে নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে। চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।