২০২৩ সালের বর্ষসেরা টেস্ট দলের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করেছে আইসিসি। যেখানে সেরার খেতাব জিততে লড়বেন অস্ট্রেলিয়ার ট্রাভিস হেড ও উসমান খাজা এবং ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও ইংল্যান্ডের জো রুট।
চলুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন সাফল্যের কারণে বাকিদের পেছনে ফেলে এই চারজন জায়গা করে নিলেন শেষ বাছাইয়ের তালিকায়।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন (ভারত)
৭ ম্যাচে ৪১ উইকেট
ভারতীয় স্পিন-অলরাউন্ডার রবিচন্দ্রন অশ্বিন গত বছর বল হাতে ছিলেন দারুণ ধারাবাহিক। ৭ ম্যাচ খেলেই এই স্পিনার তুলে নিয়েছিলেন ৪১ উইকেট। গত বছর ভারতের আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তার। অবশ্য গত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে জায়গা পাননি অশ্বিন। ভারতও ম্যাচটিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায়। ।
গত বছর ঘরের মাটিতে বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজে মাত্র ৪ ম্যাচে ২৫ উইকেট তুলে নেন অশ্বিন। আর তাতে শিরোপা ধরে রাখে ভারত। লো-স্কোরিং সিরিজে ব্যাট হাতেও ৮৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। আর তাতে তিনি সিরিজসেরাও নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাবেক স্পিনার অনিল কুম্বলেকে (১১১) পেছনে ফেলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের সর্বোচ্চ উইকেটের (১১৪) মালিকও এখন অশ্বিন।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে জায়গা না পেলেও অবশ্য দ্রুতই দলে ফিরিয়ে আনা হয় অশ্বিনকে। ফিরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে ফিরে প্রথম ম্যাচেই ১২ উইকেট নেন টেস্ট বোলারদের র্যাংকিংয়ে শীর্ষে থাকা এই স্পিনার। পরের ম্যাচে আবার ৩ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে একটি ফিফটিও হাঁকান। ২০১৬ ও ২০২১ সালে টেস্টে বর্ষসেরার খেতাব জেতা অশ্বিন এবারও তাই পুরস্কারের অন্যতম দাবিদার।
ট্রাভিস হেড (অস্ট্রেলিয়া)
১২ টেস্ট ম্যাচে ৯১৯ রান
২০২৩ সাল ছিল পুরো অস্ট্রেলিয়া দলের জন্যই দারুণ সাফল্যমণ্ডিত। আর ট্রাভিস হেডের জন্য তো ছিল স্বপ্নময় এক বছর। এক বছরেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, অ্যাশেজ সিরিজ ও ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার স্বাদ পেয়েছেন অজি ওপেনার। তবে টেস্ট ক্রিকেটে তার অর্জন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২০১৮ সালে টেস্টে অভিষেক হওয়া এই ব্যাটার গত বছরের শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ফিফটি হাঁকান। এরপর ভারতের মাটিতে বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজে বাকি অজি ব্যাটাররা যেখানে হিমশিম খাচ্ছিলেন, সেখানে মাত্র ৩ ম্যাচ খেলে ২০০-এর বেশি রান করেন তিনি।
সেই ফর্ম তিনি টেনে নেন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও। একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ওই ম্যাচে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি হাঁকান হেড, যা শেষ পর্যন্ত অজিদের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরে ম্যাচসেরাও নির্বাচিত হন তিনি। বছরে মাত্র একটিই টেস্ট সেঞ্চুরি তার, সেটাও আবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে! পরে অ্যাশেজেও ফর্ম ধরে রাখেন হেড। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম তিন ম্যাচেই ফিফটি হাঁকান তিনি। নতুন বছরেও সেই ফর্ম চলমান। পাকিস্তানের বিপক্ষে চলমান সিরিজেও তার ব্যাট নিয়মিত হাসছে।
উসমান খাজা (অস্ট্রেলিয়া)
১৩ ম্যাচে ১২১০ রান
টানা দ্বিতীয়বারের মতো বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটারের পুরস্কারে মনোনীত হলেন উসমান খাজা। ২০২২ সালের মতোই ২০২৩ সালেও ব্যাট হাতে রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছেন তিনি। বছরের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা ১৯৫* রানের ইনিংস খেলেন এই বাঁহাতি অজি ওপেনার। এরপর ভারতের মাটিতে চার ম্যাচের সিরিজে সর্বোচ্চ রান (৩৩৩) সংগ্রাহক হন তিনি। সিরিজে একটি সেঞ্চুরি (১৮০) ও ২টি ফিফটি হাঁকান এই বাঁহাতি ব্যাটার।
দারুণ ফর্ম সত্ত্বেও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল জায়গা হয়নি খাজার। তবে অ্যাশেজ দিয়ে ফিরে আবারও নিজের আসল রূপ দেখিয়ে দেন তিনি। মোট ৪৯৬ রান করে সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন খাজা। গত বছরের শেষে পাকিস্তানের বিপক্ষেও তিনবার ৪০-এর বেশি রান করেছেন তিনি। বছর শেষে তার মোট রানসংখ্যা ১২১০। বিশ্বের আর কোনো ব্যাটার গত বছর চার অঙ্কের দেখা পাননি।
জো রুট
৮ ম্যাচে ৭৮৭ রান ও ৮ উইকেট
অশ্বিনের মতো রুটও দ্বিতীয়বার বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। এর আগে ২০২১ সালে এই পুরস্কার জিতেছিলেন এই ইংলিশ ব্যাটার। গত বছরের শুরুতেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজে তিনবার ৫০-এর বেশি রান করেন তিনি। দ্বিতীয় ম্যাচের দুই ইনিংসে তিনি যথাক্রমে ১৫৩* ও ৯৫ রান করেন। অবশ্য রোমাঞ্চকর ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ১ রানে জিতে নেয় নিউজিল্যান্ড। সেই ফর্ম তিনি টেনে নেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ও অ্যাশেজ সিরিজেও।
অ্যাশেজের প্রথম ম্যাচেই অপরাজিত ১১৮ রানের ইনিংস খেলেন রুট। শেষ দুই টেস্টেও পান ফিফটির দেখা। শেষ পর্যন্ত ২-২ এ সিরিজ শেষ করে তার দল ইংল্যান্ড। রুট অবশ্য বল হাতেও গত বছরে সফল ছিলেন বলা যায়। ৮ ম্যাচে সমানসংখ্যক উইকেট তুলে নেন এই পার্ট-টাইম স্পিনার।