নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ যেন মহা-জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। ভোটারদের উপস্থিতিতে জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়ে উঠে।লাখ লাখ মানুষের মুখে শোভা পাচ্ছে সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর বিরুদ্ধে নানা স্লোগান।
এ সময় ভোটাররা বলেছেন, বহিরাগত গোলাম দস্তগীর গাজীকে আমরা আর দেখতে চাই না।
বুধবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান শাজাহান ভূঁইয়ার নির্বাচনী জনসভায় এ ঘটনা ঘটে।
রূপগঞ্জের ইতিহাসে এত বড় জনসমুদ্র এর আগে কখনো দেখা যায়নি। সাধারণ ভোটাররা বলছে, এই জনসমুদ্র সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাঠ মন্ত্রী গোলাম দস্তখালী গাজীর বিরুদ্ধে নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের প্রতিবাদ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ।
সভাস্থলের বাইরে লাখ লাখ মানুষ অবস্থান নিয়েছেন। রূপগঞ্জ উপজেলার পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
সভায় উপস্থিত সমর্থকদের উদ্দেশ্যে শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, রূপগঞ্জকে একটি স্মার্ট সিটি হিসেবে তৈরি করবেন তিনি।
গত ১৪ বছরে স্থানীয় এমপির অত্যাচারে ও শোষণে এলাকার মানুষদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটা থেকেও তাদের মুক্তি দিবেন। নির্বাচিত হলে রূপগঞ্জের কল্যাণে ধারাবাহিক কাজ করে যাবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
তিনি বক্তব্যে আরও বলেন, এ জনসমাগম বলে দিচ্ছে রূপগঞ্জের মানুষ নেতৃত্বে পরিবর্তন চায়। প্রচারণায় যতই বাধার শিকার হইনা কেন জনগণের ভালোবাসার কারণে আজ জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, জননেত্রী শেষ হাসিনার সুস্পষ্ট নির্দেশনায় আলহাজ্ব শাহজাহান ভূঁইয়া রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। নিজের প্রতীক নিয়ে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন অংশগ্রহণ ও প্রচারণায় কোনো বাধা না দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও, প্রচারণা চালানোর সময় নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন শাহজাহান ভূঁইয়া।
জনসভায় উপস্থিত শাহজাহান ভূঁইয়ার সমর্থকরা জানান, স্থানীয় প্রচারণার প্রতিটি ধাপে শাহজাহান ভূঁইয়াকে পরাস্ত করার চেষ্টা চালিয়েছেন এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী। এমনকি কেটলি প্রতীকের সমর্থকদেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে প্রচারণা বন্ধের। এরপরেও সমাবেশের এ জনসমুদ্রকে সব অত্যাচার ও অন্যায়ের প্রতিবাদ হিসেবে দেখছেন তারা।
রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ব্যারিস্টার খাঁন মোহাম্মদ শামীম আজিজের সভাপতিত্বে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মো: কামাল হোসেন কমলের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রুপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কেটলি প্রতীকের প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো: শাজাহান ভূঁইয়া।
এ সময় রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে শত শত মিছিল এসে জনসভাস্থলে যোগ দেয়। এতে পূর্বাচল রাজউকের চার নাম্বার সেক্টরের বাণিজ্য মেলার মাঠ প্রাঙ্গন কানায় কানায় পূর্ন হয়ে চারিদিকে মানুষ ছড়িয়ে পড়ে।
জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন, কাঞ্চন পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম রফিক, দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর মাষ্টার, রূপগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মশিউর রহমান তারেক, রূপগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. সোহেল আহম্মদ ভূঞা, মুড়াপাড়া ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার আব্দুল জব্বার প্রমূখ। রূপগঞ্জ ইউনিয়নের মেম্বার লিটন প্রধান ও শেখ মো: মহিউদ্দিন নেতৃত্বে জন সমাবেশে অর্ধ-লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে।
জনসভায় শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, আমি সুদীর্ঘ ৫২ বছর যাবত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পতাকা তলে একজন একনিষ্ঠ মুজিব সৈনিক হিসেবে জনগণের পাশে থেকে কাজ করছি। আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাথে আছি। ৩২ বছর যাবৎ রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছি। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশরত্ন শেখ হাসিনা’র নির্দেশক্রমে আমি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে আপনাদের কাছে দোয়াপ্রার্থী। আমৃত্যু আপনাদের সেবা করার জন্য আমি সুদৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ সুদীর্ঘ রাজনৈতিক পটপরিক্রমায় আমার ছোট ছোট ভূলকে আপনারা ক্ষমার চোখে দেখবেন। আমি যদি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারি তাহলে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নারায়ণগঞ্জ-১ রূপগঞ্জ আসনকে ভূমিদস্যু মুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, মাদকমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত, স্মার্ট ও নিরাপদ রূপগঞ্জ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করবো।