আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের আঠারো জনের ১০০ কোটি টাকার বেশি আছে। এছাড়াও ৭৭ শতাংশ কোটিপতি রয়েছেন বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি)।সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে টিআইবি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয়াদি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
মঙ্গলবার টিআইবি প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, গবেষণা করে তারা পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে বলেছিল। তাদের অনেক বড়ো গলা ছিল। তারা প্রচুর সংবাদ সম্মেলন করেছে। পরে দেখা গেল, পদ্মা সেতুতে তো দুর্নীতি হয়নি, দুর্নীতির কোনো সুযোগও সৃষ্টি হয়নি। নানা সময়ের নানা গবেষণায় দেখা যায়, সেগুলো আসলে গবেষণা না, কতগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সেই প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রকাশ করা হয়।
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আর ৭৭ শতাংশ কোটিপতির কথা বলা হয়েছে, দেশে এক কাঠা জমির দাম গ্রামেও ২০ লাখ টাকা। পাঁচ কাঠা জমির দাম এক কোটি টাকা। ঢাকা শহরে এক কোটি টাকার নিচে কোথাও জমি নেই, চট্টগ্রামেও নেই। কারও তিন কাঠা জমি থাকলেই তো সে কোটিপতি। এখন সবাই কোটিপতি। কাজেই এই হিসাব দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার কোনো সুযোগ নেই। কাজেই এই হিসাব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা নতুন সরকারে এলে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, গত ১৫ বছরে সরকার পরিচালনার সময় দ্রব্যমূল্য সব সময় মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ছিল। কোনো কোনো সময় কোনো কোনো পণ্যের মূল্য বেড়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। আজ থেকে ১৫ বছর আগে একজন দিনমজুর সারা দিন পরিশ্রম করে যে টাকা পেতেন, সেই টাকা দিয়ে চার-পাঁচ কেজি চাল কিনতে পারতেন। এখন একজন দিনমজুর সারা দিন কাজ করে যে চাল কিনতে পারেন, সেটা ১২ থেকে ১৫ কেজি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেটা আরও বেশি। চট্টগ্রামে এক হাজার টাকার নিচে দিনমুজর পাওয়া যায় না। পৃথিবীতে দ্রব্যমূল্য সব সময় বেড়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, তেতাল্লিশে কলকতা, বাংলায় যখন দুর্ভিক্ষ হয়, তখন ছয় টাকায় চল্লিশ কেজি চাল পাওয়া যেত। কিন্তু সেই চাল কিনতে না পেরে মানুষ মারা গেছে। তখন তো দ্রব্যমূল্য অনেক কম ছিল। খেয়াল রাখতে হবে, মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে কিনা। আমাদের দেশে যত না মূল্য বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে।
তবে মাঝে মাঝে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিমভাবে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়ে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, এই কথা সত্য, মাঝে মাঝে ব্যবসায়িক চক্র, মুনাফালোভী সিন্ডিকেট কোনো কোনো পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সেই পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়। এভাবে তারা ফায়দা লোটে। ভারতের একটি পত্রিকায় পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবর যখন ঢাকার অনলাইনেও প্রকাশিত হয়, তখন কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই।
মন্ত্রী বলেন, এটা হলো মুনাফালোভীদের কারসাজি। আমরা সেটিকে নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছি। আবার সরকার গঠন করতে পারলে এই মুনাফালোভী চক্র, অসাধু চক্র, যারা দেশে মাঝেমধ্যে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মুনাফালাভের চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেটা আমরা করতে পারব বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করছি।
আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় এলে আমদানি নির্ভর পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে জোর দেওয়া হবে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের কিছু ভোগ্যপণ্য আছে, যেগুলো আমদানি নির্ভর। আমরা এগুলোর উৎপাদন বাড়াতে চাই। একই সঙ্গে এগুলোর সংরক্ষণ ব্যবস্থা উন্নত করতে চাই। দেখা যায়, কিছু ভোগ্যপণ্য উৎপাদনের সময় কম দাম থাকে, আবার বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না, সেটা আমরা বাড়াতে চাই। এখন যেমন নানা মৌসুমে সব ধরনের শাকসবজি উৎপাদন হয়। আমরা ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন বাড়িয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাই। পাশাপাশি মধ্যস্বত্বভোগী যাদের কারণে পণ্যমূল্য বাড়ে, তাদের সিন্ডিক্রেট ভেঙে দিতেই আমরা কাজ করছি। আগামীতে সরকার গঠন করলে সেটা করতে পারব।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩