ফ্রান্সে তৃতীয় রাতে গড়াল বিক্ষোভ, গ্রেপ্তার ৮৭৫

ফ্রান্সে তৃতীয় রাতে গড়াল বিক্ষোভ, গ্রেপ্তার ৮৭৫

ফ্রান্সের একটি তল্লাশিচৌকিতে কিশোরকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার তৃতীয় রাতের মতো বিক্ষোভ হয়েছে। দেশজুড়ে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। তৃতীয় রাতে অন্তত ৮৭৫ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্মেলন সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরেছেন প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। আজ শুক্রবার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে সম্ভাব্য সবকিছু করা হবে।

ফ্রান্সে বিক্ষোভ ঠেকাতে দেশজুড়ে ৪০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।

এরপরও বৃহস্পতিবার রাজধানী প্যারিসে দোকানে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। অপর দিকে ফ্রান্সের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মারসেতে জনসমাবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি শহরে সন্ধ্যা থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার রাতে ৮৭৫ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন কয়েক শ পুলিশ সদস্য।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্মেলন সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন প্রেসিডেন্ট মাখোঁ। বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ফ্রান্সে বর্তমানে যা হচ্ছে, তা ‘অগ্রহণযোগ্য এবং অযৌক্তিক’। তবে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করার ঘোষণা না দিলেও বিক্ষোভ ঠেকাতে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বর্নি বলেন, আইনশৃঙ্লা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে সম্ভাব্য সব বিকল্প যাচাই করা হবে। তিনি এই সহিংসতাকে ‘অসহনীয় ও অমার্জনীয়’ বলে মন্তব্য করেছেন।

পরে এলিজাবেথ বর্নি প্যারিসের শহরতলি পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য নিশ্চিত করা আমাদের অগ্রাধিকার। আর এটি করার উপায় হলো শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।’

গত মঙ্গলবার দেশটির রাজধানী প্যারিসের শহরতলির নতেঁর একটি তল্লাশিচৌকিতে নেহাল (১৭) নামে এক কিশোরকে গুলি করে হত্যা করেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। এর পর থেকেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরে অবশ্য ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে নেহালের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী লরেন-ফ্রাঙ্ক লিওনার্দ।

তৃতীয় রাতের বিক্ষোভের নানা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা গেছে, পূর্বাঞ্চলের লিও শহরে একটি ট্রামে আগুন দেওয়া হয়েছে। প্যারিসের উত্তরে উবারভিলিয়ে শহরে একট ডিপোয় ১২ বাসে ভাঙচুর করা হয়েছে। শহরটির একটি স্থাপনায় আগুন লাগানোর ঘটনাও ঘটেছে।

এদিকে নতেঁর শহরতলিতে বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি গাড়িতে আগুন দিয়েছেন। সেখানে অনেক রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা। প্যারিসে একটি শপিং মলে জুতার দোকান ভেঙে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশজুড়ে কয়েকটি সুপারশপেও লুটপাট করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে বলে জানা গেছে। মারসে শহরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর একটি পর্যটনকেন্দ্র থেকে পর্যটকদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। উত্তর ফ্রান্সের রুবে শহরে বিক্ষোভকারীদের লাগানো আগুনে একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় পুড়ে গেছে। সেখানে কয়েকটি গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ২০০৫ সালে ফ্রান্সে এমন বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশের হাত থেকে পালাতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে দুজনের মৃত্যুর পর ওই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। বিক্ষোভ থামাতে সে সময় দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছিল ফ্রান্স সরকার।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS