পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিপুলসংখ্যক পশু কোরবানি হওয়ায় এই সময়ে মুরগির চাহিদা কমে যায়। ফলে এর দামও কমে আসে। কিন্তু এবারে পাকিস্তানে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। ঈদুল আজহার সময়েই কিনা দেশটিতে মুরগির দাম বেড়ে গেছে। খবর দ্য ডনের।
ডন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পাকিস্তানে পোলট্রিখাদ্যের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় চাহিদার তুলনায় মুরগির উৎপাদন ও জোগান কমে গেছে। এতে বাজারে মুরগির দাম বেড়েছে। দেশটিতে বর্তমানে প্রতি কেজি পোলট্রি মুরগির দাম ৫৬০ রুপি। আর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮২০ থেকে ৮৫০ রুপি কেজি দরে। অন্যদিকে হাড়বিহীন মুরগির মাংসের দাম তো গরুর মাংসের চেয়েও বেশি। পাকিস্তানে গরুর মাংসের দাম ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। কিন্তু গতকাল বুধবার দেশটিতে মুরগির হাড়বিহীন মাংসের কেজি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি দরে।
খাদ্যের ঘাটতি ও উচ্চমূল্যের কারণে বাজারে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ ৬০ শতাংশ কমেছে। ফলে দামে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে।
—চৌধুরী মোহাম্মদ আশরাফ, চেয়ারম্যান, পাকিস্তান পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (পিপিএ)।
পাকিস্তান পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (পিপিএ) কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ আশরাফ বলেন, ‘ঈদুল আজহার আগে মুরগির দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। আমার ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতায় এই প্রথম এমন ঘটেছে।’
সিন্ধু পোলট্রি হোলসেলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল আখতার সিদ্দিকি জানান, অনেক লোক এ বছর কোনো পশু কোরবানি দিচ্ছেন না। তাঁরা এ সময়ে মুরগির জন্য বাজারে ভিড় করছেন। কিন্তু এখন মুরগির সরবরাহ কম।
কামাল আখতার সিদ্দিকি আরও বলেন, ‘মুরগির চাহিদা মেটাতে ঈদের ঠিক আগের দিন সন্ধ্যায় আমার পরিচিত এক খামার থেকে পাঁচটি ট্রাকে করে মুরগি নিতে দেখলাম। আমার ব্যবসায়িক জীবনে কোরবানির ঈদের আগে মুরগির এমন চাহিদা ও সংকটের চিত্র আগে দেখিনি।’
সরকারি বিধিনিষেধের কারণে পাকিস্তানে সয়ামিলসহ বিভিন্ন পোলট্রিখাদ্য আমদানি সীমিত হয়ে গেছে। ফলে পোলট্রিখাদ্যের খাটতি তৈরি হয়ে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে ছয় মাস ধরে পোলট্রি মুরগির দাম ক্রমাগত বাড়ছে। তবে ঈদের আগে তা রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে।
পাকিস্তান পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, তারা পোলট্রিখাদ্যের তীব্র সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশটিতে পোলট্রিখাদ্যের বড় অংশ আসে আফ্রিকার দেশগুলো থেকে। কিন্তু বর্তমানে সেখান থেকে চাহিদার মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ খাদ্য সংগ্রহ করতে পারছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে কিছু পোলট্রিখাদ্য অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে আফগানিস্তান থেকে আসছে। তবে সেগুলো নিম্নমানের।
পিপিএ চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ আশরাফ বলেন, খাদ্যের ঘাটতি ও উচ্চমূল্যের কারণে বাজারে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ ৬০ শতাংশ কমেছে। এ কারণে দামে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে।
মোহাম্মদ আশরাফ জানান, এক সপ্তাহ আগে তিনি পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা আসিফ আলী জারদারির সঙ্গে দেখা করে চলমান পোলট্রি সংকট সম্পর্কে তাঁকে (জারদারি) অবহিত করেছিলেন। তবে ঈদের আগে মুরগির দাম কমানো সম্ভব হয়নি।