কোরবানির ঈদ বাকি আর মাত্র দুই দিন। কোরবানির পশু কিনতে অনেকেই হাটে যেতে শুরু করেছেন। এর মধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত চার সপ্তাহের বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি আলোচনার সময় বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি তুলে ধরেছে। এবারের করোনাভাইরাসটির সংক্রমণ প্রবণতা বেশি। করোনা নিয়ে অনেকেই আবার হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ঈদের সময় পশুহাটের অতিরিক্ত ভিড় ও জনসমাগম যেন করোনা বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন না করে, সে জন্য সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এ ছাড়া পশুর হাটে অসতর্কতায় ঘটে যেতে পারে নানা দুর্ঘটনা। বিশেষ করে শিশুদের ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকবেন।
হাটে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করুন। প্রয়োজনে দুটি মাস্ক পড়ুন। আমরা অনেক ক্ষেত্রে মনের অজান্তেই কথাবার্তা বলার সময় নাকের ওপর থেকে মাস্ক সরিয়ে ফেলি। এটি বিরাট ভুল। কেউ আবার নাক-মুখ খোলা রেখে থুতনির ওপর মাস্ক পরেন। যথানিয়মে মাস্ক না পরা ভাইরাসকে নিজ দেহে আমন্ত্রণ জানানোর নামান্তর মাত্র। মাস্ক পরিধান, খুলে ফেলা এবং সংরক্ষণের যথাযথ নিয়ম রয়েছে। সেগুলো মেনে চলতে হবে। মাস্ক শুধু করোনা থেকে নয়, হাটে বিদ্যমান নানা ভাইরাস ও জীবাণু থেকে আপনাকে রক্ষা করবে। হাটে পশুর মলমূত্র, খড়, বিচালি ইত্যাদিতে অনেকের অ্যালার্জি বা হাঁপানি হতে পারে। মাস্ক এ থেকেও সুরক্ষা দেবে।
আপনার সঙ্গী হোক স্যানিটাইজার। হাত ধৌত করার ব্যবস্থা থাকলে কিছুক্ষণ পরপর হাত ধুয়ে নিন। অন্যথায় স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। হাট থেকে বের হওয়ার সময় হাত জীবাণুমুক্ত করুন। বাসায় ঢুকে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশার আগে সাবান মেখে গোসল সেরে ফেলুন।
ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা স্বাস্থ্যসম্মত। দীর্ঘ সময় উচ্চস্বরে দামদর না করে অল্প কথায় গরু-ছাগল কেনার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, যত কথা বলবেন, ততই ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা বেড়ে যাবে।
পারতপক্ষে শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ ব্যক্তিদের নিয়ে হাটে যাবেন না। তাঁরা করোনা ও অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধির সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে আছেন। যাঁরা বুস্টার ডোজসহ টিকা নিয়েছেন এবং সক্ষম—এমন ব্যক্তিরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাটে যাবেন।
এবার প্রচণ্ড গরমের মধ্যে হাটে যেতে হবে। দীর্ঘ সময় গরমের মধ্যে থাকলে পানিশূন্যতা হতে পারে। সে জন্য হাটে গেলে বোতলে করে প্রয়োজনীয় নিরাপদ পানি সঙ্গে রাখুন। বিক্রেতা হিসেবে যাঁরা দীর্ঘ সময় হাটে অবস্থান করছেন, তাঁদের অবশ্যই এদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
গোবর, চোনা, কাদা একাকার হয়ে প্রায়শ হাট নোংরা হয়ে যায়। এর মধ্যে হাঁটা চলাফেরা করার সময় সাবধান হতে হবে। হাটে খালি পায়ে কিংবা স্যান্ডেল পড়ে হাঁটা অনুচিত। যাঁদের পায়ে ক্ষত আছে, কিংবা যাঁরা ডায়াবেটিস রোগী, তাঁরা হাটে না যাওয়াই উত্তম। হাটে গিয়ে পা থেঁতলে বা কেটে কাদা গোবর ইত্যাদি লেগে গেলে অবশ্যই সাবান দিয়ে পা ধুয়ে অ্যান্টিসেপটিক মলম লাগাতে হবে। অবস্থা অনুযায়ী টিটেনাসের টিকা নিতে হবে।
অনলাইনে কোরবানির পশু কেনার সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন, যা আপনাকে করোনাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে নিরাপদ রাখবে।
লেখক: মেডিসিন–বিশেষজ্ঞ, সিএমএইচ, ঢাকা