উৎপাদন এলাকা বগুড়ায় কাঁচা মরিচের কেজি ৩২০

উৎপাদন এলাকা বগুড়ায় কাঁচা মরিচের কেজি ৩২০

উৎপাদন এলাকা বগুড়ায় কাঁচা মরিচের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বগুড়ার খুচরা বাজারে চার গুণ বেড়ে আজ সোমবার এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম হয়েছে ৩২০ টাকা। এ ছাড়া মহাস্থান হাটে পাইকারি পর্যায়ে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকা কেজি দরে। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে দাম বেড়েছে আদা, রসুন, পেঁয়াজ ও শসার।

আজ বিকেলে বগুড়া শহরের ফতেহ আলী সবজি বাজারের একটি দোকানে এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম জানতে চান একজন ক্রেতা। এ সময় ৩২০ টাকা কেজি দাম চেয়ে বিক্রেতা বলেন, ‘দাম করা চলবি না, বিন্দি জাতের কড়া পত্তা। একদর লাগবি।’

দাম শুনে অবাক ক্রেতা আজিম হায়দার। তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও এক কেজি কাঁচা মরিচ কিনলাম ১০০ টাকায়, সপ্তাহের ব্যবধানে ৩২০। অন্যবার বৃষ্টি–বন্যা হলেই দাম বাড়ত। এবার তো বৃষ্টি-বন্যা নেই।’ এ কথা শুনে বিক্রেতা বলেন, ‘এবার খরাত খ্যাত মরে শ্যাষ। বাজারত সরবরাহ কম। দামও তাই চড়া।’

বাজার ঘুরে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগেও খুচরা পর্যায়ে এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল গড়ে ১০০ টাকা। এখন কাঁচা মরিচ মানভেদে প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সকালে রাজাবাজার ও ফতেহ আলী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৩২০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এ ছাড়া বিন্দি জাতের কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছিল ৩৬০ টাকা কেজি দরে। দাম শুনে অনেক ক্রেতাকেই খালি হাতে ফিরতে দেখা গেছে।

ফতেহ আলী বাজারে কাঁচা মরিচ কিনতে এসেছিলেন শহরের চেলোপাড়া এলাকার ঝরনা বেগম। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগেও বাজার থেকে এক কেজি কাঁচা মরিচ কিনতাম ৫০-৬০ টাকায়। এখন ২৫০ গ্রাম মরিচ কিনতেই ৮০ টাকা লাগছে। দাম বাড়ার কারণে ১০০ গ্রাম করে কাঁচা মরিচ কিনছি।’

এদিকে কাঁচা মরিচের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। ফতেহ আলী বাজারে এক কেজি দেশি শসা ১০০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৮০, করলা ৮০ ও পেঁয়াজ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সবচেয়ে বেড়েছে আদার দাম। আমদানি করা আদা প্রতি কেজি ৪০০ ও রসুন ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

ফতেহ আলী বাজারের খুচরা বিক্রেতা মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এক মাস আগে এক কেজি পেঁয়াজ ৪০, আদা ১৬০ ও রসুন ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

সবজির অন্যতম পাইকারি মোকাম বগুড়ার মহাস্থান হাট। পাইকারি এই মোকাম থেকে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ছাড়াও সারা দেশে কাঁচা মরিচ যায়।

আজ দুপুরে এ হাটে পাইকারি পর্যায়ে এক কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকায়, দুই সপ্তাহ আগে যা ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে এই হাটে এক কেজি শসা বিক্রি হয়েছে ১৮ টাকা দরে। আজ পাইকারি পর্যায়ে সেই শসার দাম প্রায় তিন গুণ বেড়ে ৫০ টাকা কেজি হয়েছে।

এ ছাড়া দুই সপ্তাহ আগের ৮০ টাকা কেজির বেগুন দাম বেড়ে গতকাল ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। দাম বেড়েছে করলা, কাঁচকলা, আলুসহ অন্য সবজিরও। এদিন প্রতি কেজি করলা ৪০, দেশি আলু ৩৮, হল্যান্ড আলু ৩২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

হাটের কাঁচা মরিচ বিক্রেতা রাশিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগেও হাটত কাঁচা পত্তা (মরিচ) বেচ্চি ৭০-৮০ টেকা কেজি দরত। সেই পত্তা এক লাফে এক্কেবারে ডাবল সেঞ্চুরি পার করচে।’

মহাস্থান হাটের সবজির পাইকারি ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টি হলে মরিচের খেত নষ্ট হয়। এবার হয়েছে উল্টো। অত্যধিক গরম ও খরায় মরিচ খেত পুড়েছে। ফলে বাজারে কাঁচা মরিচ ও শসার সরবরাহ কমেছে। এতে দাম বেড়েছে অনেক।

মহাস্থান হাট কাঁচা ও পাকা মাল আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হাটে সরবরাহ হ্রাস পাওয়ায় কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে।

বাজারে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গেলে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে বলে মনে করেন রাজাবাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশ থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হলে দামও কমে আসবে। এ ছাড়া ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আদা-রসুনের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আর দেশি পেঁয়াজের দাম উৎপাদন এলাকায় ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় গত বছরের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS