পানির ন্যায্য অধিকার না পেলে দেশের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে: কাদের গনি চৌধুরী

পানির ন্যায্য অধিকার না পেলে দেশের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে: কাদের গনি চৌধুরী

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদের প্রাণ-প্রকৃতি, জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পানির অভাবে মারা গেছে অনেক নদ-নদী।এখনো শতাধিক নদ-নদীর মরণ দশা।

শুক্রবার (১৬ মে) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মওলানা ভাসানীর ফারাক্কা লংমার্চ দিবস উপলক্ষে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি (আইএফসি) আয়োজিত গণসমাবেশে তিনি এসব বলেন।

বিশিষ্ট সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।

আলোচনায় অংশ নেন কমরেড খালেকুজ্জামান, টিপু বিশ্বাস, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ড. জসিম উদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ টিপু সুলতান, রফিকুল ইসলাম বাবলু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও বিএনপি নেতা মীর সরাফত আলী সপু।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ফারাক্কার প্রভাবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে কৃষি উৎপাদনের খরচ। ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে দেশের অন্তত ছয় কোটি মানুষ সেচ সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গঙ্গা-পদ্মার প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার নৌপথ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। লবণাক্ততার কারণে খুলনা অঞ্চলে ধান উৎপাদন কমে গেছে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া উজানের পানির অভাবে সাগর থেকে আসা লোনা পানি ক্রমেই উত্তরের জমি গ্রাস করছে। সুপেয় পানির অভাবে উপকূলীয় এলাকা ছাড়ছে মানুষ। লাখো মানুষ অবর্ণনীয় কষ্টে জীবন কাটাচ্ছে। জলবায়ু হয়ে উঠছে চরমভাবাপন্ন।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, বর্তমানে প্রতি শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গা-পদ্মা নদীর প্রবাহ ভয়াবহভাবে কমে যায়। নদীর বুকে গরুর গাড়ি চলে, বালুবাহী ট্রাক চলে, অথচ পানি নেই। ১৯৭৫ সাল থেকে গঙ্গা-পদ্মার প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার নৌপথ অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের পরিস্থিতি উল্লেখ করে কাদের গনি বলেন, গঙ্গার আয়তন অর্ধেকে নেমে এসেছে। পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে, জলজ প্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে। পানি নেই বলে ইলিশ আর আসে না, ডলফিন আর ঘড়িয়াল বিলুপ্তপ্রায়। পাশাপাশি হারিয়ে গেছে দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী। সুন্দরবনের অস্তিত্বই আজ হুমকির মুখে।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ভারত উজানের রাষ্ট্র হিসেবে ভাটির দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে সৎ প্রতিবেশী হিসেবে আচরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফারাক্কা সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ সরকারগুলো টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের পক্ষে দেশের স্বার্থবিরোধী ওকালতি করেছে। ফারাক্কা, টিপাইমুখসহ ভারতের অব্যাহত পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।  

তিনি বলেন, ভারত মূলত একটি উদ্দেশে পানি আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে। সেটা হচ্ছে রাজনৈতিক, যাতে বাংলাদেশকে ব্যর্থ ও পঙ্গু রাষ্ট্রে পরিণত করা যায়। ভারতের পানি আগ্রাসন রুখতে হলে, দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, সব রাজনীতিবিদেরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশের জনগণের ঐক্যকে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। পানি বিষয়ে ভারতের সব সরকারই সব সময় আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এবং আছে। তাদের কোনো আশ্বাসের বাস্তবায়ন বাংলাদেশের মানুষ দেখতে পায়নি গত ৫০ বছরেও। ভারতের কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হলে প্রয়োজন মওলানা ভাসানী ও শহীদ জিয়ার মতো নেতৃত্ব। মরণবাঁধ ফারাক্কার কারণে আজ বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মরুভূমিতে পরিণত হতে বসেছে। ভারতের এ পানি নিয়ে অপরাজনীতি বন্ধ করতে বাধ্য করতে হবে।

তিনি বলেন, ভারতের কাছ থেকে অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় কোনো দলীয় বিষয় নয়। এটা দেশের মানুষের বাঁচা-মরার বিষয়। পানির ন্যায্য অধিকার না পেলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। এ অবস্থায় পানির অধিকার আদায়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের অভ্যন্তরে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, প্রয়োজনে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS