বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বিগত সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। এখন যদি দ্রুত সংস্কার বা সমাধান চাওয়া হয়, আমার চাকরি ছেড়ে দিতে হবে।কারণ, এক ব্যাংকের ২৭ হাজার কোটি টাকার অ্যাসেট এক পরিবারের হাতে ছিল। তারা ২৩ হাজার নিয়েছে। আমার হাতে ম্যাজিক নেই।
সোমবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে দৈনিক বণিক বার্তা আয়োজিত ‘বৈষম্য, আর্থিক অপরাধ ও বাংলাদেশের অর্থনীতির নিরাময়’ শীর্ষক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, কয়েকটি ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছে না। কিন্তু তাদের নগদ সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে গত তিন মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে কোনো নগদ সহায়তা দেওয়া হয়নি। কারণ ম্যাক্রো ইকোনমি স্থিতিশীল রাখতে হবে। এটা স্থিতিশীল না হলে কোনো বিনিয়োগ হবে না। এজন্য ব্যবসায়ীদের ধৈর্য ধরতে হবে।
আমি বলতে পারি, কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না। কারণ তাদের তারল্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, বলেন গভর্নর।
তিনি বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য যারা ব্যাংকের টাকা মেরেছেন, তারা যেন ব্যাংকের সঙ্গে থেকে টাকা ফেরত দেন। বাইরে যে টাকা চলে গেছে, সেসব কীভাবে আইনগত প্রক্রিয়ায় ফেরত আনা যায় সেই চেষ্টা চলছে।
অর্থপাচার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে দেশ থেকে কয়েক লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। এটা ফিরে পাওয়া কঠিন। তবে আমাদের জাল ফেলা হয়েছে। এখন গোটানো বাকি। এরইমধ্যে আমরা দেশ ও দেশের বাইরেও যোগাযোগ করেছি। আমাদের সহযোগিতার জন্য চলতি সপ্তাহে আমেরিকার প্রতিনিধি আসছেন, যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি আসবে, বিশ্ব ব্যাংক আসবে এবং সিঙ্গাপুরের সঙ্গেও কথা হবে।
তিনি বলেন, আমরা চাই না কোনো ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বা শিল্প বন্ধ হয়ে যাক। সেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। আবার কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হিসাবও জব্দ করা হয়নি, হবেও না।
গভর্নর বলেন, ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। আমরা এটাকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমাদের এজেন্ট ব্যাংক বড় কাজ করছে। তাদের মাধ্যমে এমএফএস সেবা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সভাপতিত্বে আয়োজিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং উপস্থিত ছিলেন।