‘কিং অব পপ’ নামে খ্যাত মাইকেল জ্যাকসনের ১৫তম প্রয়াণ দিবস আজ। ২০০৯ সালের এই দিনে ৫০ বছর বয়সে মারা যান তিনি, যার মাধ্যমে সংগীত দুনিয়ার অবিস্মরণীয় এক অধ্যায়ের ইতি ঘটে।
মাইকেলের জন্ম ১৯৫৮ সালের ২৯ আগস্ট। দুই কামরার ছোট্ট বাড়ি, যেখানে ১০ সন্তান নিয়ে জ্যাকসন দম্পতির বসবাস। এর মধ্যে অষ্টম সন্তানের নাম মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন। পরিবারে সংগীতের অল্পবিস্তর চর্চা ছিল। সেই সুবাদে মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই স্টেজে গান করার সুযোগ হয় মাইকেলের। কিন্তু কে জানত, যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকসন স্ট্রিটে বেড়ে ওঠা সেই শিশু একদিন বিশ্বসংগীতের সফলতম তারকায় পরিণত হবে!
১৯৬৪ সালে মাইকেলের ভাইয়েরা একটি ব্যান্ড গঠন করে ‘জ্যাকসন ফাইভ’ নামে। এর সদস্য ছিলেন মাইকেলও। প্রায় সাত বছর ব্যান্ডটির হয়ে গান করেছেন তিনি। ১৯৭১ সালে ‘মোটাউন রেকর্ডস’-এর মাধ্যমে একক ক্যারিয়ারে নজর দেন মাইকেল। এখান থেকে বেশ কয়েকটি একক গান প্রকাশ করে সাড়া পান তিনি।
অতঃপর ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘গট টু বি দেয়ার’। তবে মাইকেল জনপ্রিয়তার আকাশ ছুঁয়েছিলেন তার পঞ্চম অ্যালবাম ‘অফ দ্য ওয়াল’ দিয়ে। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে সর্বকালের সবচেয়ে সফল সঙ্গীতশিল্পী তিনি। পপসাম্রাজ্যের এই কিংবদন্তি গান, নাচ ও ফ্যাশনে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে মৃত্যুর পরও মাইকেল জ্যাকসনকে নিয়ে বিশ্বময় রয়েছে ভক্ত-অনুরাগীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও কৌতূহল।
তাকে নিয়ে চলছে নানা গবেষণাও। মাইকেল জ্যাকসন একাধারে সঙ্গীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, গান লেখক, অভিনেতা, সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী। মূলত, তার নাচ ও গানের অসাধারণ শৈলী তাকে বিশ্বের শীর্ষ তারকায় পরিণত করে।
মাইকেল জ্যাকসনের রেকর্ড তৈরি করা অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে থ্রিলার (১৯৮২), ব্যাড (১৯৮৭), ডেঞ্জারাস (১৯৯১), হিস্টোরি (১৯৯৫), ইনভিন্সিবল (২০০১) ইত্যাদি। গানের জন্য ১৩টি গ্র্যামি জিতেছেন মাইকেল। তাকে বিবেচনা করা হয় ‘সর্বকালের সবচেয়ে সফল বিনোদন তারকা’ হিসেবে।
দাম্পত্য জীবনে মাইকেল জ্যাকসন ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিলেন বিশ্বের সব রকস্টারের স্বপ্ন নায়ক এলভিস প্রিসলির একমাত্র সন্তান লিসা মেরি প্রিসলিকে বিয়ে করে। কিন্তু অল্প দিনেই ভাঙন আসে এই সুখের সংসারে। ১৯৯৬ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ৯৭ সালে আবারও বিয়ের পিঁড়িতে বসেন পপ সম্রাট। পেশায় নার্স এই ভদ্রমহিলার নাম ডোবরা জেনি রো। তারা দু’বছর সংসার করার পর ১৯৯৯ সালে আলাদা হয়ে যান এবং তালাকের সময় দুই সন্তানের প্রতিপালনের দায়িত্ব ডোবরা মাইকেলকে প্রদান করেন। জ্যাকসনের তিন ছেলে-মেয়ে। পুত্র প্রিন্স মাইকেল জন্ম নেয় ১৯৯৭ সালে। মেয়ে ক্যাথরিনা ১৯৯৮ সালে। প্রিন্স মাইকেল টু নামে তার একটি পুত্র আছে যে ২০০২ সালে জন্মগ্রহণ করে।
জীবদ্দশায় নিজের অর্থায়নে লিউকেমিয়া এবং ক্যান্সার ইন্সটিটিউট স্থাপন করেন মাইকেল জ্যাকসন। এছাড়াও শিশুদের জন্য এবং দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জন্য তিনি কোটি কোটি ডলার দান করে গেছেন। ১৯৯৬ সালে তার আয়ের অর্থ দিয়ে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। নিজের সব সৃষ্টি-সৃজনের উজ্জ্বলতায় বিশ্বমানবের কাছে আলোকিত হয়ে থাকবেন কিংবদন্তি মাইকেল জ্যাকসন।