ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দুইদিন ধরে ভারী বৃষ্টি বর্ষণ হচ্ছে সিলেটে। দুইদিন থেকে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে প্লাবিত হচ্ছে সিলেটের নিম্নাঞ্চল।ইতোমধ্যে প্রায় সবগুলো নদ-নদীর পানি বেড়েছে। ইতোমধ্যে সিলেটের তিনটি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বিশেষ করে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বুধবার (২৯ মে) দুপুর ১২টায় সিলেটে প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারাসহ তিন নদীর পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেছে। আরও কয়েকটি পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, বুধবার দুপুর ১২টায় কুশিয়ারা নদীর পানি অমলশীদ পয়েন্টে ১৫ দশমিক ৭৭ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কুশিয়ারার অমলশীদ এলাকায় বিপৎসীমা ১৫ দশমিক ৪০। আর সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্ট ১৩ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলায় সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৮৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী সত্যেন্দ্র বৈদ্য বলেন, উজানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সিলেটের নদ-নদীর পান বেড়েছে। বুধবার তিনটি নদীর পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেছে।
এদিকে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
গত দুই দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বড় নদী সারিনদী ও পিয়াইন নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।
আকস্মিক বন্যায় উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের গোয়াবাড়ী, বাইরাখেল, মযনাহাটি, বন্দরহাটি, মেঘলী, তিলকৈপাড়া, ডিবিরহাওর, ফুলবাড়ী, টিপরাখরা, খলারবন্দ, মাঝেরবিল, হর্নি, নয়াবাড়ী, কালিঞ্জিাদবাড়ী, জৈন্তাপুর ইউনিয়নে লামনীগ্রাম, মোয়াখাই, বিরাইমারা, মুক্তাপুর, বিরাইমারা হাওর, লক্ষ্মীপুর, কেন্দ্রী, খারুবিল, নলজুরী, শেওলারটুক, বাওনহাওর, চারিকাটা ইউনিয়নের লাল, থুবাং, উত্তর বাউরভাগসহ বিভিন্ন গ্রাম পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেটের তথ্যমতে, প্রাক বর্ষাকালে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট এলাকায় বিপৎসীমা লেভেল ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। সেখানে বুধবার ছিল ১২ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার। সিলেটে সুরমার পানির বিপৎসীমা ৮ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার। বুধবার সকাল ৯টায় ছিল ৯ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার। এছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৩ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার। বুধবার সকাল ৯টায় ছিল ১৫ দশমিক ২২ সেন্টিমিটার।
কুশিয়ারা নদীর পানি বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। বুধবার সকাল ৯টায় ছিল ১১ দশমিক ৬৬ সেন্টিমিটার। সারি-গোয়াইন নদীর সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে বুধবার সকাল ৯টায় ছিল ১১ দশমিক ২৯ সেন্টিমিটার। সারি-গোয়াইন নদীর গোয়াইনঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা ছিল ৮ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে বুধবার সকাল ৯টায় ছিল ৯ দশমিক ৭৩ সেন্টিমিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, মূলত উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে সিলেটের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বৃষ্টি তো আমাদের দেশেও ছিল। তাছাড়া প্রাক বর্ষাকালে বৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। আর বৃষ্টি হলে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়াটাও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, শুষ্ক মৌসুমের হিসেবে সিলেটে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে আছে। যেহেতু আমাদের দেশে বৃষ্টি হচ্ছে না তাই এখন কিছুটা স্বস্তি আছে। এখন যদি ভারতের মেঘালয় বা আসাসে বৃষ্টি হয় তাহলে তো পাহাড়ি ঢল আসবেই। এজন্য আমাদের বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ১৪৬ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। প্রাক বর্ষাকাল হিসেবে এখন প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হওয়ার কথা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব আহমদ বলেন, আগামী তিন দিন সিলেটে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
অপরদিকে সিলেট ছাড়াও মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় উজানের বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে বড়লেখা-কুলাউড়া-মৌলভীবাজার সড়কের কাঁঠালতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কে পানি ওঠেছে। এতে করে সাধারণ মানুষজনকে জনদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।