‘ডা. আব্দুল আজিজ সংসদ সদস্য (এমপি) একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি। তিনি চিটার বাটপার নিয়ে ঘুরে বেড়ান, ত্যাগী নেতাকর্মীদের চেনেন না।তারা তিন ভাই এবং ৬৪ জন ভাগ্নে মিলে গত পাঁচ বছর লুটপাট করেছেন। সেই জবাব দিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন সুইটের পক্ষে কাজ করছি’।
সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে টানা দ্বিতীয়বার নৌকার টিকিট পাওয়া ডা. আব্দুল আজিজ এমপির সম্পর্কে ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন তাড়াশ সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাবুল সেখ।
এমপি আব্দুল আজিজ কোনো জনকল্যাণমূলক কাজ করেননি এমন অভিযোগ এনে তাড়াশ কৃষক আন্দোলনের আহ্বায়ক মীর শহিদুল ইসলাম বলেন, ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নের পাশাপাশি ভাইদের দিয়ে টি, আর-কাবিখার নিয়ন্ত্রণ করতেন। স্ত্রী-শ্যালক ও ভাইদের ৩/৪টি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি বানিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। নৌকার মাঝি ভালো না হওয়ায় ঈগল পাখির কাজ করছি।
এমপির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ আনলেন মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম বুলবুল, তালম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্বাসুজ্জামান, সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বকুল এবং তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেনসহ তৃণমূলের একাধিক নেতাকর্মী। এ নেতারা প্রকাশ্যে নৌকার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে নৌকা সমর্থকরা দাবি করেন, অভিমানে কিছু নেতাকর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে থাকলেও এখানে নৌকারই বিজয় হবে।
সিরাজগঞ্জ-৩ নির্বাচনী এলাকায় সরেজমিনে গেলে এ তথ্য উঠে আসে। এ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৪ হাজার ৮৪৩টি। আসনটিতে নৌকা ও ঈগল ছাড়াও তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন, জাতীয় পার্টির জাকির হোসেন (লাঙ্গল), বিএনএমের গোলাম মোস্তফা (নোঙ্গর) ও স্বতন্ত্র নুরুল ইসলাম (ট্রাক)।
সরেজমিনে জানা যায়, তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সামাদ খন্দকার নিস্ক্রিয় রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত কুমার কর্মকার নৌকার পক্ষে কাজ করলেও সহ-সভাপতি ইউনুস তাড়াশী, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক আলহাজ আলীসহ বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা নৌকা ডোবাতে মাঠে নেমেছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে আদাজল খেয়ে নেমেছেন তাড়াশ সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মীর শহিদুর রহমান ও বাবলু শেখ, সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বকুল, মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিকুল ইসলাম বুলবুল, তালম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্বাসুজ্জামান এবং দেশীগ্রাম ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসাকসহ তৃণমূলে বেশিরভাগ নেতাকর্মী। এমনকি নৌকা প্রার্থী ডা. আজিজের নিজ ইউনিয়ন সগুনার বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী ভুট্টো ও সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামসহ অনেক নেতাকর্মীই সরাসরি তার বিরুদ্ধে কাজ করছেন। তবে নৌকার কাজ করছেন উপজেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ বেশ কয়েকটি ইউপি চেয়ারম্যান।
অপরদিকে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতিসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাই নৌকার বিপক্ষে রয়েছেন।
দেশীগ্রাম ইউপির চেয়ারম্যান জানেন্দ্রনাথ বসাক বলেন, এমপি হয়ে ডা. আজিজ ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেননি। তিনি শুধু তেলবাজ পছন্দ করেন। জনপ্রিয়দের হিংসা করেন। বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীর দিতেন। আজ নিজেই স্বতন্ত্রের কবলে পড়েছেন। আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ নিয়েছি।
তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত কুমার কর্মকার বলেন, রাগ-অভিমানের কারণে কিছু কিছু নেতাকর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছে। তারপরও নৌকা জেতানোর জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
অপরদিকে রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নৌকার কাজ করলেও দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীরাই ঈগলের পক্ষে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল হালিম খান দুলাল বলেন, এমপির স্বেচ্ছাচারিতার জবাব দিতে প্রার্থী হয়েছিলাম, মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি।
রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ হৃদয় বলেন, পাঁচ বছরে সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। দলও আগের চেয়ে এখন অনেক মজবুত। আশা করছি, আবারও নৌকার বিজয় হবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী কৃষিবিদ সাখাওয়াত হোসেন সুইট বলেন, এটি কৃষি প্রধান একটি অঞ্চল। এখানকার কৃষক, দিনমজুর ও দলেরবঞ্চিত নেতাকর্মীই আমরা প্রাণ। চলনবিল অধ্যুষিত এ অঞ্চলের উন্নয়নের লক্ষ্যে এবং ভোটারদের ভোট কেন্দ্রমুখি করতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। জনগণের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। ইনশাল্লাহ বিজয়ী হয়ে ঘরে ফিরবো।
নৌকার প্রার্থী ডা. আব্দুল আজিজ বলেন, আমি পেশায় চিকিৎসক, মানুষের সেবা করা আমার নেশা। পাঁচ বছরে অনেক উন্নয়ন করেছি। মানুষের পাশে থেকেছি। আশা করছি জনগণ আবারও আমাকেই ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। দলের কিছু মানুষ ভুল বুঝে বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে থাকতে পারে, কিন্তু ভোট তারা নৌকাতেই দেবে।