হানি নাটস কেন আলোচনায়, পুষ্টিবিদেরাই–বা কী বলছেন

হানি নাটস কেন আলোচনায়, পুষ্টিবিদেরাই–বা কী বলছেন

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় আছে ‘হানি নাটস’। বাংলায় কী বলা যায়? মধুময় বাদাম? সহজ করে বললে বাদাম ও মধুর মিশ্রণ। কেন হঠাৎ এই খাবার আলোচনায় এল? আর তা কতটা উপকারী?

মধুর সঙ্গে বাদামের সন্ধি নতুন মনে হলেও বাদাম ও মধুর ইতিহাস বেশ পুরোনো। গবেষকদের মতে, প্রাচীনকাল থেকেই খাবার হিসেবে ফলমূল, শাকসবজি ও মাংসের পাশাপাশি বাদামেরও চাহিদা ছিল। বাদামের উচ্চ পুষ্টিগুণ এই চাহিদার অন্যতম কারণ। বাড়তি যত্ন ছাড়াই বাদাম অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়। ফলে মানবসভ্যতার পথপরিক্রমায় খাবারের তালিকায় বাদামের অবস্থান বেশ শক্ত। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, গ্রিক ও রোমানরা ওষুধ হিসেবেও বাদাম ব্যবহার করত।

তবে হানি নাটস নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে সম্ভবত করোনার পর। করোনাকালে অনলাইনকেন্দ্রিক ব্যবসাগুলোর প্রসারই হানি নাটসের নাম আমাদের কানে পৌঁছে দিয়েছে।

ফেসবুকনির্ভর বিক্রেতারা তাঁদের চটকদার বিজ্ঞাপনে দাবি করছেন, সুন্দরবনের মধু বা নিজেদের লিচুবাগান থেকে সংগৃহীত মধু, সৌদি আরবের ত্বিন ফল ও খেঁজুর এবং দেশি–বিদেশি হরেক রকম বাদাম মিশিয়ে হানি নাটস তৈরি হয়। অনেক ভিডিওতে মৌচাকে ধোঁয়া দিয়ে মধু সংগ্রহের প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে সব উপকরণ এক করে হানি নাটস তৈরির প্রক্রিয়াও দেখানো হয়।

হানি নাটসের একটি প্যাকেজে সাধারণত কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, পেস্তাবাদাম, আখরোট, অ্যাপ্রিকট, মাবরুম খেজুর, আজওয়া খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি থাকে। দাম ও চাহিদাভেদে অনেকে আলুবোখারা, তিল, সূর্যমুখীর বিজ, চিয়া সিডের মতো বীজও দেন। এর সঙ্গে মেশানো হয় মধু। বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ঘুরে দেখা গেল, ১ কেজির একটি হানি নাটস প্যাকেজে প্রায় ৫০০-৬০০ গ্রাম বাদামের সঙ্গে ৪০০-৫০০ গ্রাম মধু থাকে।

হানি নাটস নিয়ে আলোচনা জমে উঠেছে মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে। অনলাইন বিজ্ঞাপন ও এই খাবার নিয়ে ফেসবুক লাইভে ব্যাপক প্রচারণা খাবারটিকে পরিচিত করেছে। বিশেষ করে, জামশেদ মজুমদার নামের একজন বিক্রেতা রীতিমতো ভাইরাল হয়েছেন এই হানি নাটস বিক্রি করেই। তাঁর ‘আমি জামশেদ মজুমদার, ঘরের বাজার ডটকম থেকে’ বক্তব্যটি ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিবাচক-নেতিবাচক দুভাবেই এসেছে এই নাম। অনেকে ট্রলও করছেন। তবে জামশেদ মজুমদারের মতো আরও অনেক হানি নাটস ব্যবসায়ী অনলাইনে বেশ সরব।

পুষ্টিবিদ যা বললেন

কিন্তু হানি নাটস মানুষ কেন খাবে? অনলাইন ব্যবসায়ীদের বিজ্ঞাপনের ভাষার সত্যতাই–বা কতটুকু? এ সম্পর্কে ঢাকার ফরাজি হাসপাতালের পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদের বক্তব্য, হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বাদামের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বাদামে বিদ্যমান ওমেগা–৩ চর্বি হৃৎপিণ্ড ভালো রাখে এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া বাদামে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও আয়রন আছে, যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দৈহিক গঠন সুন্দর করে।

এ ছাড়া বাদাম হাড় শক্ত করে, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, স্মৃতিশক্তি বাড়ায় ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য বাদাম দারুণ উপকারী। গর্ভের সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে জানালেন এই পুষ্টিবিদ।

অন্যদিকে আয়ুর্বেদ ও ইউনানি চিকিৎসাশাস্ত্রে মধুকে বলা হয় মহৌষধ। এটি যেমন বলকারক, তেমনি সুস্বাদু। হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধ করা, রক্তনালি প্রসারণের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করা, হৃদ্‌পেশির কার্যক্রম ত্বরান্বিত করাসহ এর আছে আরও নানান উপকারিতা।

মধু ও বাদাম দুটিই পুষ্টিকর বলে একসঙ্গে খেলে উপকারিতা মেলে বেশি। কিন্তু চটকদার বিজ্ঞাপনে না ভুলে খেতে হবে পরিমাণমতো। পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদের পরামর্শ, কিডনি ও হৃৎপিণ্ডের রোগ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজনজনিত সমস্যা, অ্যালার্জিসহ বেশ কিছু রোগ না থাকলে একজন দৈনিক সর্বোচ্চ ৫০-৬০ গ্রামের মতো হানি নাটস খেতে পারেন। মধুতে ক্যালরির পরিমাণ বেশি, বিষয়টি মাথায় রেখে হানি নাটস খেতে হবে। অতিরিক্ত খেলে হজমে বিপাক, অ্যালার্জি, রক্তের চর্বির মাত্রা বৃদ্ধি, রক্তের চিনির মাত্রা বৃদ্ধি, ওজন বৃদ্ধি, কিডনির সমস্যা, অতিরিক্ত গরম লাগাসহ নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS