দেশে-বিদেশে সবখানে এই সরকার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘তাদের (সরকার) যেতেই হবে।’
আজ সোমবার বিকেলে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে এক অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় সভায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
প্রায় ৪০ মিনিটের এই মতবিনিময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আগামী নির্বাচন, বর্তমান সংবিধান, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বের তৎপরতা, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন দেশের তৎপরতা ও পদক্ষেপগুলো কী বার্তা দিচ্ছে—এ ধরনের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বার্তা তো একটাই দিচ্ছে আন্তর্জাতিক বিশ্ব, যে তোমার যা কিছু হওয়ার হয়ে গেছে। এখন জনগণের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাও, আর তা না হলে তোমাকে যেতে হবে। এই বার্তা তারা দিয়েই দিয়েছে পরিষ্কার করে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পশ্চিমা বিশ্ব বলেন, গণতান্ত্রিক বিশ্ব বলেন, তারা পরিষ্কার করে বলছে বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই, গণতন্ত্র নেই, ভোটের অধিকার নেই। সেটা নিশ্চিত করার জন্য তারা তাদের মতো করে কাজ করছে। দেশে-বিদেশে সবখানে এই সরকার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। মানুষের কাছেও তারা এখন আর গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং তাদের যেতেই হবে।’
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যের উল্লেখ করে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, তাহলে কি বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনীতিতে বিদেশি শক্তির এতটাই প্রভাব? জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তার মানে হচ্ছে সরকার নেই। সেন্ট মার্টিন না দিলে যদি ক্ষমতায় থাকা না যায়, তাহলে তো তিনি নাই। কারণ, তিনি তো দেবেন না। তাহলে উনি নাই। মানেটা তো সেটাই দাঁড়াচ্ছে। আসলে এই বক্তব্যটা ওনার, আর ওনার দলের।
আমাদের বক্তব্য সেটা নয়, আমরা বরাবরই বলে আসছি যে তাদের দুঃশাসন এবং গণতন্ত্র বিরোধিতা এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে, শুধু দেশের মানুষ নয়, আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক বিশ্বও বলতে বাধ্য হচ্ছে এখানে মানবাধিকার নেই, গণতন্ত্র নেই। আমরা মনে করি, এটাই সত্য।’
জাতীয় নির্বাচনের সময় আছে আর পাঁচ মাস। বিএনপি সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করতে পারবে? প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যত কঠিন পরিস্থিতিই আসুক, তাঁরা সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন।
এমন এক প্রশ্নে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কোনো কমান্ডার কি বলে আই একসেপ্ট ডিফিট। কমান্ডার শেষ পর্যন্তই যুদ্ধ করতে থাকে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘কথাটা হচ্ছে বিরোধী দলের যে ন্যায়সংগত আন্দোলন, এটা এখন বিরোধী দলের হাতে নেই—এটা জনগণের কাছে চলে গেছে। জনগণ পরিবর্তন চায়। জনগণের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তারা দাবি মানতে বাধ্য হবে।’
নির্বাচনের আগে এই ঈদ কিন্তু শেষ ঈদ। যৌথ ঘোষণা, জাতীয় সরকারের রূপরেখা কখন ঘোষণা করা হবে, এক দফার আন্দোলনে কবে শুরু হবে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এক দফার আন্দোলনেই আছি। একেবারে আনুষ্ঠানিকভাবে আসবে খুব শিগগির। যৌথ ঘোষণা, রূপরেখা সবই আসবে, অস্থির হবেন না। আমরা আমাদের মতো করে যেতে চাই।’
মতবিনিময়ে মির্জা ফখরুল আবারও অভিযোগ করেন, বিরোধী দলের নেতাদের, বিশেষ করে যাঁরা নির্বাচন অতীতে করেছেন বা করতে পারেন—তাঁদের বিভিন্নভাবে হুমকি, তুলে নিয়ে যাওয়া, তাঁদের ভয় দেখানো, এগুলো করা হচ্ছে। শুধু তা–ই নয়, যাঁরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, তাঁদের চাকরি পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থার মধ্যে কীভাবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা। আমাদের মূল নেতা যিনি, খালেদা জিয়া—তাঁকে পাঁচ বছর ধরে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটক করে রেখেছে। তারেক রহমানকে নির্বাসিত করে রেখেছে, আমাদের সবার বিরুদ্ধে মামলা, কীভাবে বিরোধী দল এ রকম একটা অবস্থায় নির্বাচন করতে পারবে।’ তিনি এ-ও বলেন, নির্বাচন তো হতেই হবে। কিন্তু সে নির্বাচন হতে হবে একেবারে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এ ছাড়া নির্বাচন হবে না।
মতবিনিময়ের একপর্যায়ে মির্জা ফখরুল রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অবদান ও ভূমিকার কথা স্মরণ করে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, আসলে আওয়ামী লীগের জন্য আমার একটু কষ্টই হয়। কষ্ট হয় যে আওয়ামী লীগ একটা অতি পুরোনো রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ সারা জীবন কিন্তু অতীতে মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছে, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। সেই আওয়ামী লীগ আজকে জনগণ থেকে এত দূরে চলে গেছে, এত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে যে তারা জনগণের কষ্টটা পর্যন্ত বুঝতে পারছে না। মানুষ কেন তাদের থেকে এত দূরে চলে গেল, মানুষ কেন তাদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না, সেটাও তারা বোঝার চেষ্টা করছে না।
শুধু কথা দিয়ে, মুখের জোরে, জবরদস্তি রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছে।’