অভ্যাসে আবদ্ধ হলে শিল্পীর কাজে পুনরাবৃত্তি আসে। ছবির বিষয়, আঁকার পদ্ধতি, রঙের ব্যবহার সবকিছুই নিরীক্ষার ভেতর দিয়ে গেলে তৈরি হয় নতুন কোনো শিল্পকর্ম। অনেক সময় শিল্পী নিজেও জানেন না তাঁর কাজটি শেষ হবে কোথায় গিয়ে। একজন শিল্পীর যাত্রাপথই হচ্ছে অন্য রকম কিছুর সন্ধান করা। ‘মনির আ পোর্ট্রেট অব অ্যান আর্টিস্ট’ প্রামাণ্যচিত্রে নিজের জীবন, দর্শন নিয়ে এমন অনুভবের কথা বললেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম।
শিল্পীর জীবন ও কাজ নিয়ে ‘মনির আ পোর্ট্রেট অব অ্যান আর্টিস্ট’ প্রামাণ্যচিত্রটির প্রথমবারের মতো প্রদর্শনী হলো শনিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। প্রদর্শনী শুরুর আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বরেণ্য শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার এবং শিল্পী মনিরুল ইসলাম। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু, প্রামাণ্যচিত্রের পরিচালক আশিক মুস্তাফা এবং প্রযোজক রুবাইয়াত হোসেন।
আর দর্শক সারিতে ছিলেন বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরীসহ অনেক বিশিষ্টজন।
চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারের ছাত্র ছিলেন শিল্পী মনিরুল ইসলাম। সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারের কথায় উঠে আসে ছাত্র মনিরুল ইসলামের ছবি আঁকার গল্প। তিনি বলেন, বাস্তবতা ও স্বপ্নের কাছাকাছি এক আবহ তৈরি করে তাঁর ছবি। বড় ক্যানভাসে জলরং নিয়ে কাজ করার দক্ষতা তখনই জানিয়ে দিয়েছিলেন এই শিল্পী। মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, ছয় দশক আগে তরুণ সময়েও নিজের ছবির ব্যাপারে নিষ্ঠাবান ছিলেন মনিরুল ইসলাম।
‘মনির আ পোর্ট্রেট অব অ্যান আর্টিস্ট’ ৮০ মিনিটের এ প্রামাণ্যচিত্র তৈরির কাজ ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয়েছে বলে জানালেন শিল্পী নিজে। এ সময় শিল্পীকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে বলে উল্লেখ করলেন পরিচালক আশিক মুস্তাফা।
ছাপচিত্রের জন্য বিখ্যাত শিল্পী মনিরুল ইসলামের শিল্পজীবনযাত্রার গল্প উঠে এসেছে এই প্রামাণ্যচিত্রে। কখনো তিনি দেশে ঢাকায় নিজের স্টুডিওতে ছবি আঁকছেন, কখনো স্পেনে নিজের বাড়ির জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সময় কাটাচ্ছেন একা। কখনো স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন বাংলাদেশে ব্যবহার করা আঁকার কাগজের ধরন নিয়ে। কখনো পৌঁছে গেছেন বিখ্যাত কোনো গ্যালারিতে। বর্ণনাধর্মী এই প্রামাণ্যচিত্রে ধরা আছে শিল্পীর দর্শন। ৮০ মিনিটের শেষ সময়ে প্রামাণ্যচিত্রে শিল্পী বললেন, সবকিছুর শুরু আর শেষ ধুলোয়। শিল্প এর ব্যতিক্রম নয়। জানালেন শিল্পী যখন কিছু ভাঙতে চায় বা নতুন করে দেখতে চায়; কখনো কখনো তাকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। কোনো কোনো সময় ঘটে যায় অতি প্রাকৃত কিছু।
ছাপচিত্রের জন্য বিশেষভাবে খ্যাতিমান শিল্পী মনিরুল ইসলাম এচিংয়ে এমন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছেন, যা স্পেনে ‘মনিরোর স্কুল’ বলে পরিচিত। বিশ্বের অনেক দেশে প্রদর্শিত হয়েছে তাঁর একক ও যৌথ প্রদর্শনী। তিনি ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে একুশে পদক পেয়েছেন। ১৯৯৭ সালে স্পেনের রাষ্ট্রীয় পদক, ২০১০ সালে স্পেনের সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা দ্য ক্রস অব দ্য অফিসার অব দ্য অর্ডার অব কুইন ইসাবেলা পুরস্কার ছাড়াও পেয়েছেন বহু সম্মাননা।