News Headline :
আস্থাহীনরা গলা চড়িয়ে অন্যকে দোষারোপ করে: আফজাল হোসেন

আস্থাহীনরা গলা চড়িয়ে অন্যকে দোষারোপ করে: আফজাল হোসেন

দেশের নন্দিত অভিনেতা, নির্মাতা, লেখক ও চিত্রশিল্পী আফজাল হোসেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই শিল্পী সামাজিকমাধ্যমে বেশ সক্রিয়।নানা বিষয়ে ফেসবুকে নিজের মতামত তুলে ধরেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) লেখেন দেশপ্রেম নিয়ে।

শুরুতেই এই কিংবদন্তি অভিনেতা লেখেন, আমরা সবাই খুব দেশপ্রেমিক। ষোলো আনায় আমাদের সন্তুষ্টি তেমন আসে না তাই প্রমাণ দিতে চাই, ষোলোর উপরে আঠারো আনা দেশপ্রেমিক আমরা। পরিমাণ বুঝিয়ে দেবার পরও মনে উসখুস থাকে- তখন কথার খই ফুটিয়ে বোঝাতে চাই, দেশপ্রেমে আমরা কতখানি খাঁটি, নির্ভেজাল।  

তিনি প্রশ্ন করে লেখেন, কাকে প্রমাণ দিতে চাই আমরা? কেনো হাজারটা কথা বলে কয়ে আমাদের প্রমাণ দেওয়া লাগে? দেশটা আমার, আমি আমার মতো করে তাকে ভালোবাসি, ভালোবাসবো। কতটা, কীভাবে ভালোবাসি তা আমার ব্যাপার- আমার সঙ্গে আমার তা নিয়ে অজস্রবার বোঝাপড়া হতে পারে, হয়ও।  

আফজাল হোসেন লেখেন, দেশের ভালো কে কতটা চায়, তা প্রমাণ দিতে সকলকেই দিনরাত এতো এতো বকর বকর করতে হয়- তা কি “ঠাকুর ঘরে কে? আমি কলা খাইনি” গল্পের মতো!  না কি “খালি কলসি বাজে বেশি” এই প্রবচনের মতো? যেটাই হোক, আমরা কেউই নির্ভেজাল নই। আমাদের ভালোবাসায় ত্রুটি আছে। তা থাকা দোষের নয়। বাবা মা, সন্তান-সন্ততিদের প্রতি  ভালোবাসাতেও অনেক ত্রুটি থাকে। ত্রুটি থাকে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কেও। দোষগুণ পাশাপাশি রয়েছে বলেই সকল সম্পর্কই দু-ধারি তলোয়ারের মতো- তিক্ত এবং মধুর।

যোগ করে তিনি লেখেন, জীবনে ভালো মন্দ আছে, ভালোবাসাতেও থাকবে। আমরা আয়নার সামনে দাঁড়াই- নিজেকেই দেখা যায় আয়নায়। কখনও নিজেকে ভালো লাগে, কখনও লাগে না। তার জন্য আয়না বা নিজেকে দোষারোপ করি না কেউ। কতজন জানি, আমাদের দুটো চোখ, কান, নাকের দুইপাশ একরকম দেখতে কিন্তু মাপে কম বেশি আছে। মিল-অমিল, অসঙ্গতি বহুকিছুতে রয়েছে- সব মিলিয়েই জীবন। কার কোনটা কম আর কি কি বেশি- তা নিয়ে অনেকজনের অন্তহীন মাথাব্যথা। যেনো দেশটা একটা প্রতিযোগিতার মাঠ- সবাই সে মাঠে কোমর বেঁধে নেমে পড়ে প্রমাণ দিতে চায়, আমার যা আছে তা তোমার চেয়ে বেশি।

মনস্তত্ত্ববিদদের উদাহারণ দিয়ে আফজাল হোসেন লেখেন, মনস্তত্ত্ববিদরা এই সমস্যাকে হীনমন্যতা বলবেন। যা, যতটুকু নিজের মধ্যে আছে, তা আমাদের সন্তুষ্ট করতে পারে না। নিজেদের প্রতি নিজেদেরই অনেক সন্দেহ- তাই যতটুকু আছে, বলে বলে তার চেয়েও অনেক বেশি আছে বোঝাতে হয়। কেনো এই বোঝাতে চাওয়া? কেউ কারও মালিক নয়। কারও অধীনস্ত নই কেউ। কেউ কাউকে খাওয়ায় পরায় না। নিজেরটা খেয়ে পরে, নিজের বিশ্বাস মাফিক চলে বলে, আরেকজনকে কেনো কৈফিয়ত দিতে হবে বলে ভাবি? কৈফিয়ত আমরা দেই। আমাদের দিতে হয় কারণ অধিকাংশজনই ভান ভালোবাসি। আমরা অনেককাল যাবৎ মনে আর মুখে এক নই, তাই নিজেদের ওপর নিজেদের বিশ্বাস পোক্ত হতে পারেনি। হাল্কা পলকা বিশ্বাসী মন প্রমাণ দিতে চায়, নিত্যই বক বক করে বোঝাতে চায়- আমার কম নেই, আছে তোমার চেয়েও বেশি।

আস্থাহীনরা গলা চড়িয়ে অন্যকে দোষারোপ করে। উল্লেখ করে আফজাল হোসেন আরও লেখেন, এ দেশে কে কিসে কম বা একে অন্যের ভুল ধরতে তারাই ওঁত পেতে থাকে, যারা নিজেরাই শূন্য। নিজেরা নিজেদের প্রতি যারা আস্থাহীন। শূন্যের আগে সংখ্যা যোগ করতে আস্থাহীন মানুষেরা গলা চড়িয়ে অন্যকে দোষারোপ করে। অপরকে দোষারোপ করেই জাহির করতে হয় নিজের প্রেম। দেশ ঠিকই বুঝতে পারে, কারা প্রেমিক আর কারা কারা প্রেমিকের মতো দেখতে- বলে কয়ে প্রেমিক।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS