News Headline :
বিশ্বব্যবস্থা কতটা পাল্টাবেন ট্রাম্প?

বিশ্বব্যবস্থা কতটা পাল্টাবেন ট্রাম্প?

গাজা থেকে কিয়েভ, বেইজিং থেকে অটোয়া— ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ অর্থাৎ ‘ট্রাম্প ২.০’ বিশ্বব্যবস্থার অনেক হিসাব-নিকাশই পাল্টে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার অনেক আগে থেকেই তার দ্বিতীয় মেয়াদের বৈশ্বিক প্রভাব টের পাওয়া যাচ্ছিল।

গত নভেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে হোয়াইট হাউসের দরজা নিশ্চিত করেন তিনি। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারির শেষভাগে এসে শপথ নেন ট্রাম্প।

নির্বাচনী প্রচারণা থেকেই তিনি অভিবাসী ইস্যু, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ, চীন-মেক্সিকো-কানাডার ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপসহ নানা ইস্যুতে আলোচনায় ছিলেন। নির্বাচনে জেতার পরও এসব ইস্যুতে বেশ সরব ছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে বেশ বড় কিছু ঘোষণা দেন এই রিপাবলিকান।  

ট্রাম্পের শপথ পরবর্তী ভাষণে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হিসেবে মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারির বিষয়টিও ছিল। দেন পানামা খাল ফিরিয়ে নেওয়ারও হুমকি। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা নেওয়ার মধ্য দিয়ে আমেরিকার স্বর্ণযুগে পা দিয়েছে বলেও ভাষণে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।

দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাহী আদেশের ঝড় তুলবেন এমন আভাস আগেই দিয়েছিলেন ট্রাম্প। বাস্তবে তা করতেও শুরু করেন। মার্কিন সরকারের নীতিতে নিজের প্রভাব রাখার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের যে মূল হাতিয়ার- নির্বাহী আদেশ, ক্ষমতা নেওয়ার পর তা ব্যবহারে এতটুকু বিলম্ব করেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। শতাধিক নির্বাহী আদেশে সই করেন।

অবৈধ অভিবাসী তাড়ানোর তৎপরতা

দায়িত্ব নিয়েই ওভাল অফিসের ডেস্কে বসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিবাসন ঠেকাতে একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করেন। এর মধ্যে একটিতে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। কর্মকর্তারা জানান, ট্রাম্পের পরিকল্পনা জন্মগত নাগরিকত্ব বন্ধ করা। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানরা আর আগের মতো যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বলে গণ্য হবেন না।

অভিবাসন রোধের আরেক পদক্ষেপ হিসেবে দক্ষিণ সীমান্তে সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মেক্সিকোর দক্ষিণ সীমান্তজুড়ে অভিবাসনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প তিনি আগের প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গির তীব্র সমালোচনা করেন।  

ভারত ইতোমধ্যে তাদের ১৮ হাজারের মতো অবৈধ অভিবাসী ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তাদের প্রথম দল এরই মধ্যে পাঞ্জাবে পৌঁছেছে। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই অবৈধ ভারতীয়দের যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনই চিহ্নিত করেছে। অবৈধ অভিবাসীদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করে দিল্লি ওয়াশিংটনকে বার্তা দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যেন কোনো ধরনের বাণিজ্যিক বিধি-নিষেধ আরোপ না করে।

হুমকি-পাল্টা হুমকির পর শেষ পর্যন্ত কলম্বিয়া তাদের অবৈধ অভিবাসীদের নিতে রাজি হয়। ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের বহনকারী দুটি সামরিক বিমানকে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট অবতরণ করতে না দিলে ট্রাম্প দেশটির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেন ট্রাম্প।

জবাবে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো বলেন, তিনিও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টা ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। কিন্তু শষ পর্যন্ত তিনি অভিবাসীদের নিতে রাজি হন। তবে তার চাওয়া, অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে হবে মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে অবৈধ অভিবাসীরা ‘অপরাধী’। সম্প্রতি এক পরিকল্পনায় তিনি জানান, ৩০ হাজারের মতো ‘অপরাধী অবৈধ এলিয়েনকে’ (অবৈধ অভিবাসী) আটকে রাখতে গুয়ান্তানামো বে কারাগারে একটি বন্দিশালা নির্মাণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

কিয়েভ থেকে গাজা

নির্বাচনী প্রচারণা থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার বলে আসছিলেন, তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ একদিনের মধ্যে শেষ করতে পারবেন। পুরোপুরিভাবে যুদ্ধের ইতি টানতে ছয় মাস সময় লাগতে পারে বলেও এরপর জানান তিনি। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বাইডেন প্রশাসন কিয়েভকে যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সামরিক অনুদান দিয়েছে, ট্রাম্প বরাবরই সেটির কড়া সমালোচনা করে আসছিলেন।

শপথের আগে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছিলেন, যুদ্ধ নিয়ে তিনি ট্রাম্পের অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সংলাপের জন্য প্রস্তুত। এক্ষেত্রে কিছুটা দুর্বল অবস্থান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির। ট্রাম্পের এই মেয়াদে কিয়েভের সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হতে পারে, এই চিন্তা তার। সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ না পেলে যুদ্ধক্ষেত্রে অনেকেটাই পিছিয়ে পড়বে ইউক্রেন।

ক্ষমতায় বসার পর ট্রাম্প জানান, প্রায় তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধে একটি ‘চুক্তিতে’ পৌঁছাতে আলোচনা করতে চান জেলেনস্কি। অন্যদিকে পুতিন সম্প্রতি বলেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়া আলোচনায় বসতে পারে তবে জেলেনস্কির সঙ্গে নয়। তিনি জেলেনস্কিকে ‘অবৈধ’ প্রেসিডেন্ট মনে করেন।

ইউক্রেন ও রাশিয়ার জন্য নিযুক্ত ট্রাম্পের বিশেষ দূত কিথ কিলোগ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানান, যুদ্ধের কারণে স্থগিত থাকা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়ে যাওয়া উচিত। বিপরীতে জেলেনস্কি বলেন, যুদ্ধ শেষে রাশিয়া আর শত্রুতা শুরু করবে না, এমন নিশ্চয়তা পাওয়া গেলে এ বছরই নির্বাচন করা সম্ভব।

এদিকে গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা সহিংসতার পর জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ছয় সপ্তাহের প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয় ইসরায়েল ও হামাস। ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার আগেই এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তবে যুদ্ধবিরতি চুক্তির কৃতিত্ব নিতে ভুল করেননি ট্রাম্প।  

ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব নিতে গিয়ে বলেন, গত নভেম্বরে নির্বাচনে তার ঐতিহাসিক বিজয়ের ফলেই ঐতিহাসিক এ চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। গত নির্বাচনে জয় বিশ্বকে সংকেত দিয়েছে যে তার প্রশাসন শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে এবং সব আমেরিকান ও মিত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করবে।  
 
ট্রাম্প তার মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে স্টিভ উইটকফের নাম উল্লেখ করে বলেন, স্টিভ ও জাতীয় নিরাপত্তা দল ইসরায়েল ও আমাদের মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, তার দল শান্তি প্রচারের কাজ পুরো মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে চালিয়ে যাবে এবং আব্রাহাম চুক্তির গতি কাজে লাগিয়ে আরও অগ্রগতি আনবে। এটি আমেরিকার জন্য এবং প্রকৃতপক্ষে পুরো বিশ্বের জন্য মহান কিছু অর্জনের সূচনা মাত্র।

তবে যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের। হোয়াইট হাউসে এক সাংবাদিক জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, দুই পক্ষ সব শর্ত মেনে চলে যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখবে কি না, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন।

এর আগে চুক্তি নিয়ে চাপ দেওয়ার সময় ট্রাম্প ইসরায়েলকে অকুণ্ঠচিত্তে সমর্থন দেওয়ার কথা জানান। আগের প্রশাসন ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে কিছু কট্টর অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। তবে ট্রাম্প প্রথম দিনই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তা বাতিল করেন।  

যুদ্ধবিরতির মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার নতুন এক প্রস্তাবের কথা জানিয়েছেন। তিনি গাজা খালি করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে সেখানকার ফিলিস্তিনিদের মিশর ও জর্ডান পাঠানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, এই পদক্ষেপ স্বল্পমেয়াদি কিংবা দীর্ঘমেয়াদিও হতে পারে। হামাস এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে।

ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরোধিতা করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে একটি যৌথ চিঠি দিয়েছেন জর্ডান, মিসর, সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। তাদের সঙ্গে রয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হুসেইন আল-শেখও।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠলে বাইডেন প্রসাশন ইসরায়েলের দুই হাজার পাউন্ডের শক্তিশালী একটি বোমার চালান আটকে দেয়। ক্ষমতায় বসেই ট্রাম্প সেই চালান পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং সাংবাদিকদের বলেন, তারা এর জন্য অর্থ দিয়েছে এবং অনেক দিন ধরে এর জন্য অপেক্ষা করছে।

বিদেশে সহায়তা বন্ধ

দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফেরার এরপরই যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সহযোগিতা বন্ধের বিষয়টি সামনে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও বিদেশি দূতাবাসগুলোতে এরইমধ্যে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।  

ফাঁস হওয়া এক নথি অনুযায়ী, আগামী ৯০ দিনের জন্য সব মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে যেসব বৈদেশিক সহযোগিতা স্থগিত করা হয়েছে, সেগুলো বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় উন্নয়ন সহায়তা থেকে সামরিক সহায়তা পর্যন্ত সবকিছুর ওপর প্রভাব পড়বে এমনটিই বলা হচ্ছে।  

তবে এই স্থগিতাদেশ জরুরি খাদ্য সহায়তা এবং ইসরায়েল ও মিশরের জন্য সামরিক তহবিলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ওই নথি অনুযায়ী, কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পর্যালোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো নতুন তহবিল অনুমোদিত হবে না বা বিদ্যমান কোনো চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো যাবে না।  

একইসঙ্গে চলমান প্রকল্পের কাজও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে, যতক্ষণ না পর্যালোচনা শেষ হয়। ট্রাম্প প্রশাসন তাদের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিদেশি সাহায্যের বিস্তারিত পর্যালোচনা ৮৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এর আগে বলেছিলেন, বিদেশে আমাদের ব্যয় শুধু তখনই হওয়া উচিত, যদি তা আমেরিকাকে নিরাপদ, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করে। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, নতুন নির্দেশনা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে বিদেশি সাহায্য কর্মসূচির ওপর অনেক বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় তহবিল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। তার অভিযোগ, দেশটি জমি বাজেয়াপ্ত করছে এবং নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষদের সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ করছে। ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘এ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ভবিষ্যৎ সব তহবিল বন্ধ রাখব।

পাল্টাপাল্টি শুল্কে বাণিজ্যযুদ্ধ 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের বিরুদ্ধে বাড়তি শুল্ক আরোপের পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেন।  

কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ট্রাম্পের আরোপ করা ২৫ শতাংশ শুল্ক মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হতে যাওয়ার কথা ছিল। তবে সময়সীমা শুরু হওয়ার আগেই তা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত আসে।

বিপরীতে কানাডা ও মেক্সিকো এই সময়ের মধ্যে সীমান্ত নিরাপত্তা ও মাদক পাচার কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নিতে রাজি হয়েছে। কানাডা একজন ফেন্টানিল জার নিয়োগ দেবে আর মেক্সিকো সীমান্তে দশ হাজার সৈন্য পাঠাবে।

এর আগে অবশ্য মার্কিন শুল্ক আরোপের বিপরীতে দেশ দুটি তাদের পাল্টা পদক্ষেপের কথা জানায়। পরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেইনবাউমের সঙ্গে কয়েক দফা ফোনালাপের পর এ সমঝোতা হলো।

তবে চীনের ওপর আরোপ করা ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর মঙ্গলবার থেকেই হচ্ছে। চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করার ঘোষণা দিয়েছে। পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের ফলে এক ধরনের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলো দুই দেশের মধ্যে।

চীন, কানাডা ও মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার। দেশটি ৪০ শতাংশ পণ্য এসব দেশ থেকে আমদানি করে থাকে। আমেরিকান বিয়ার, ওয়াইন, ফল, ফলের জুস, ভেজিটেবল, পারফিউম, পোশাক ও জুতার ওপর শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। এ ছাড়া খেলাধুলার সামগ্রী, ফার্নিচার, প্লাস্টিক ও গৃহস্থালি রয়েছে এ তালিকায়।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্কারোপ নিশ্চিত করার কথাও জানিয়েছেন ট্রাম্প। এরসঙ্গে যুক্তরাজ্যের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা উড়িয়ে না দিয়ে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা যেতে পারে।  

আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি

ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রাসী পররাষ্ট্র নীতির আভাস তার শপথের আগে থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল। ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়ে তার আগ্রহের কথা জানান। পানামা খাল ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও হোয়াইট হাউসে ফেরার আগেই জানান তিনি। আর শপথ পরবর্তী ভাষণে তিনি নিজের বিস্তর উচ্চাশার কথা তুলে ধরেন।

শপথ নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমেরিকার স্বর্ণযুগ এখন থেকেই শুরু হচ্ছে। আজকের এই দিন থেকেই আমাদের দেশ উন্নতি করবে এবং সম্মানিত হবে। আমি খুব সহজেই আমেরিকাকে প্রথমে রাখব।

আমেরিকা নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে নতুন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের সার্বভৌমত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, আমাদের নিরাপত্তা পুনরুদ্ধার হবে, বিচারব্যবস্থার ভারসাম্য পুনঃস্থাপিত হবে। পরবর্তী সময়ে মেক্সিকো উপসাগরকে ‘গালফ অব আমেরিকা’ নামে পরিচিত করানো হবে বলেও উল্লেখ করেন।

নিজের নেতৃত্বে আমেরিকার সীমানা বাড়ানোর কথা বলেন ট্রাম্প। তবে দ্রুতই তার এই প্রসঙ্গ একটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেষ হয়, যেখানে তিনি মঙ্গলগ্রহে আমেরিকার পতাকা গেঁথে দেওয়ার কথাও বলেন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম মেয়াদে ২০১৯ সালে ট্রাম্প প্রথম গ্রিনল্যান্ড কেনার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু এবার শপথের আগে অর্থনৈতিক বা সামরিক শক্তির মাধ্যমে গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে অস্বীকার করে তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে যান।

গ্রিনল্যান্ড আর্কটিক বা উত্তর মহাসাগরে অবস্থিত। এটি ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। রাশিয়া ও চীনের প্রভাব বিস্তারের হুমকির মুখে গ্রিনল্যান্ডের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য ডেনমার্ককে চাপ দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করছেন ট্রাম্প, এমনটি মনে করা হচ্ছে।  

তবে ড্যানিশ ও ইউরোপীয় কর্মকর্তারা এ বিষয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বলছেন, গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয় এবং এর আঞ্চলিক অখণ্ডতা অবশ্যই রক্ষা করা হবে।

শপথ নেওয়ার পর দেওয়া বক্তব্য পানামা খাল প্রসঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এটি আমাদের কখনো তৈরি করাই উচিত হয়নি। পানামা খাল চীনারা পরিচালনা করছে বলেও দাবি করেন তিনি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, আমরা এটা চীনকে দিইনি। আমরা আবার এটা ফিরিয়ে নেব।

পানামা খাল আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগপথ। যুক্তরাষ্ট্রের মোট কনটেইনার পরিবহনের ৪০ শতাংশ এ পথ দিয়েই যায়। এই খাল ১৯৯৯ সালের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র পানামার কাছে হস্তান্তর করেছিল। ট্রাম্পের দাবি, চীন আশপাশের বন্দরগুলোতে বিনিয়োগের মাধ্যমে খালের ওপর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।

গেল শুক্রবারও ট্রাম্প তার অবস্থান থেকে সরেননি। পানামা সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা ইতিমধ্যে অনেক কিছু করার প্রস্তাব দিয়েছে, কিন্তু আমরা মনে করি, এটি ফিরিয়ে নেওয়া যথাযথ হবে। তিনি অভিযোগ করেন, চীনা ভাষার সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলছে পানামা। খালের বিষয়ে চুক্তি লঙ্ঘন হয়েছে, এমনটি ঢাকতেই তারা এমনটি করেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS