শিশুদের শীতকালীন ডায়রিয়া হলে যা করতে হবে

শিশুদের শীতকালীন ডায়রিয়া হলে যা করতে হবে

শীতকালে শিশুদের সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়ার পাশাপাশি ডায়রিয়ার প্রকোপও বেড়ে যায়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাসপাতালগুলোতে এখন ডায়রিয়া রোগীদের ভিড় বাড়ছে।

প্রতিদিন কারও কমপক্ষে তিনবার বা এর বেশি পাতলা পায়খানা হলে এবং মলের চেয়ে পানির পরিমাণ অনেক বেশি থাকলে তাকে ডায়রিয়া বলা হয়। স্বাভাবিক নরম পায়খানা যদি তিন বা তার বেশি হয়, তা কিন্তু ডায়রিয়া নয়। যেসব শিশু বুকের দুধ পান করে, তারাও বারবার নরম পায়খানা করে, সেটিও ডায়রিয়া নয়। পাতলা পায়খানার সঙ্গে রক্ত মিশ্রিত থাকলে সেটা আমাশয়।

শীতকালে শিশুর ডায়রিয়া হওয়ার প্রধান কারণ রোটা ভাইরাস। এ ছাড়া ‘অ্যাডিনো’ ভাইরাস সংক্রমণে সর্দি–কাশির পাশাপাশি শিশুর ডায়রিয়াও হতে পারে।

ডায়রিয়ার কারণে সৃষ্ট তীব্র পানিশূন্যতা এবং রক্তে লবণ–পানির তারতম্য অনেক বাচ্চার মৃত্যুর কারণ হয়। ডায়রিয়ার আরেক বিপদ হাইপারনেট্রিমিয়া। ভুলভাবে স্যালাইন খাওয়ানোর কারণে অনেক শিশুর রক্তে মাত্রাতিরিক্ত সোডিয়াম বেড়ে যায়, একেই বলে হাইপারনেট্রিমিয়া। এর জন্য অনেক শিশুকে আইসিইউতে রেখেও চিকিৎসা দিতে হয়।

এ সময় বাচ্চাদের ডায়রিয়ার শুরুতে সাধারণত জ্বর হয়। সঙ্গে সর্দি বা বমিও থাকতে পারে। প্রতিদিন ৮-১০ বার সবুজাভ হলুদ রঙের পায়খানা হতে পারে।

ডায়রিয়া হলে

বাচ্চার যেন পানিশূন্যতা না হয়, সেদিকে সবার আগে খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য বাচ্চাকে বারবার স্যালাইন খাওয়ানো প্রয়োজন। তবে স্যালাইন যেন সঠিকভাবে বানানো হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। স্যালাইনের প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশনা মেনে স্যালাইন তৈরি করতে হবে। অন্যথায় শরীরে লবণ–পানির তারতম্য ঘটে আরও ক্ষতির কারণ হতে পারে। এই স্যালাইন ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ভালো থাকে।

ঘরে স্যালাইনের প্যাকেট না থাকলে স্যালাইন প্রস্তুত করে নেওয়া যেতে পারে। ৬ চামচ চিনি ও আধা চামচ লবণ ১ লিটার বিশুদ্ধ পানিতে ভালোভাবে গুলে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে স্যালাইন। স্যালাইন তৈরির সময় উপাদানে কমবেশি করা যাবে না। চিনির পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে ডায়রিয়া বেড়ে যেতে পারে, আবার অতিরিক্ত লবণ শিশুর মৃত্যুর কারণও হতে পারে। ঘরে তৈরি স্যালাইন ছয় ঘণ্টার মধ্যেই পান করতে হবে।

স্যালাইনের পাশাপাশি যেসব বাচ্চা বুকের দুধ খায়, তাদের সেটা চালিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি অন্য তরল ও স্বাভাবিক খাবারও চালিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক–জাতীয় দেওয়া উচিত নয়। যদি শিশুর মধ্যে পানিশূন্যতার লক্ষণ যেমন চোখ ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া, শরীরের চামড়া ঢিলে হয়ে যাওয়া, অবসন্ন হয়ে পড়া ইত্যাদির সঙ্গে অত্যধিক বমি, জ্বরের তীব্রতা বাড়তে থাকে এবং পায়খানার সঙ্গে রক্ত যায়, তবে শিশুকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS