আবারও মাইনাস টু ফর্মুলা ষড়যন্ত্র

আবারও মাইনাস টু ফর্মুলা ষড়যন্ত্র

এবারের টার্গেট খালেদা জিয়া-তারেক রহমান

ওয়ান-ইলেভেনে ‘মাইনাস টু’ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়ে দেশবিরোধী স্বার্থান্বেষী মহল আবারও একই ফর্মুলা নিয়ে ষড়যন্ত্রে নেমেছে।  আওয়ামী লীগ সভানেত্রী পালিয়ে যাওয়ার কারণে ষড়যন্ত্রকারীদের এবারের টার্গেট খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান।

দেশ রাজনীতিশূন্য এবং দেশে বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীদের ‘ধ্বংস’ করতে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নই এবারের লক্ষ্য। আর এ বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সচেতন নাগরিকরা বিক্ষোভ করেছেন।  

কারওয়ানবাজারে অবস্থিত একটি জাতীয় বাংলা দৈনিক অফিসের সামনে গরু জবাই করেছে। তাদের ‘র’-এর এজেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করে বিচার দাবি করেছে। ২০০৭ সালের ১১ জুন বাংলা পত্রিকাটির সম্পাদক মাইনাস টু ফর্মুলা হিসেবে লিখেছিলেন ‘দুই নেত্রীকে সরে দাঁড়াতে হবে’।  

সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এক বক্তব্যের পর নতুন করে আলোচনায় আসে মাইনাস টু ফর্মুলা।

তিনি বলেছেন, ‘মাইনাস টু ফর্মুলা নিয়ে কেউ যেন আবার চিন্তা না করেন। অথবা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিএনপিকে বাদ দিয়ে কোনো ষড়যন্ত্রে যেন লিপ্ত না হন। ’ 

মাইনাস-২ ফর্মুলার বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করার পর বিষয়টি নিয়ে দলটির ভেতরে ও বাইরে নানা ধরনের আলোচনাও শুরু হয়েছে।  

খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে রাখা বা তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা তৈরি করার মতো বিষয় আছে কি না, বিবিসির এমন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এমন দুরভিসন্ধি কেউ পোষণ করতে পারেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হবে না। বরং আমরা পরিষ্কার করে বলে দিতে পারি বাংলাদেশে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাইপাস করে কিছু হবে না। ’

এবারের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ও এর নেত্রী শেখ হাসিনা উৎখাত হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এরপর থেকে বিএনপি দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দাবি করে আসছে। তবে সরকারের দিক থেকে বারবারই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের ওপর।  

অন্যদিকে আন্দোলনকারী অনেকেই আকার-ইঙ্গিতে বলার চেষ্টা করছেন, ‘আগে সংস্কার, তারপর নির্বাচন’। পাশাপাশি বিভিন্নখাতে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোও কাজ করে যাচ্ছে, এর মধ্যে সংবিধান, পুলিশ ও প্রশাসন সংস্কারের মতো কমিশন রয়েছে। বিতর্কিত ওই জাতীয় দৈনিকটির এজেন্ডা হলো নির্বাচন বিলম্বিত করে তাদের কলামিস্টরাই যেন দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকেন।  

উল্লেখ্য, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারে যারা উপদেষ্টা, তাদের অনেকেই প্রথম আলোর কলামিস্ট। সেই কারণে দেশবাসী মনে করছে ওই পত্রিকাটি বর্তমান সরকারকে পরিচালিত করছে।

প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে নাগাদ দেশে ফিরতে পারবেন তা-ও এখনো দলটি নিশ্চিত হতে পারেনি। কিছু মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পেলেও সব আইনি বাধা অপসারণে প্রশাসনিক ধীরগতিতে দলের অনেকের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কারও কারও বক্তৃতাও বিএনপিকে ইঙ্গিত করে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতারা।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় প্রথম আলো সম্পাদক দেশকে রাজনীতি ও রাজনীতিক শূন্য করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। কিন্তু তার সেই গর্হিত অপকর্মের কোনো বিচার হয়নি। রাজনীতি থেকে দেশের প্রধান দুই নারী নেত্রীকে সরিয়ে দিতে খোদ প্রথম আলো সম্পাদক নিজেই কলম ধরেছিলেন। সেই সময় দিনের পর দিন ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ নিয়ে প্রথম আলোয় সম্পাদকীয় লেখা হয়। রাজনীতি থেকে রাজনীতিকদের উচ্ছেদ করে সুশীল সমাজের অংশ বলে পরিচিত এলিট নাগরিকদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালিয়েছে প্রথম আলো।  

দেশের ললাটে অকার্যকর রাষ্ট্রের তকমা এঁটে দিতে ও বিভিন্ন উসকানি এবং নেতিবাচক প্রচারণার মধ্য দিয়ে অসাংবিধানিক শক্তিকে ক্ষমতায় বসাতে উৎসাহ জুগিয়েছেন মতিউর রহমান সম্পাদিত বিতর্কিত দৈনিকটি। দেশের শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের হয়রানিও এর অন্যতম কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম আলো দেশে একাধিকবার অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করলেও বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে। ওয়ান-ইলেভেনের সময় প্রথম আলো সূক্ষ্মভাবে তাদের ফান ম্যাগাজিন ‘আলপিন’র মাধ্যমে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ব্যঙ্গ কৌতুক প্রকাশ করে। এতে সারা দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ধর্মপ্রাণ মানুষ প্রথম আলো সম্পাদককে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক থাকায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে এক সালিশ বৈঠকে তিনি বায়তুল মোকাররম মসজিদের তৎকালীন খতিব মাওলানা উবায়দুল হকের কাছে তওবা পড়ে ও করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে যান।  বিভিন্ন পত্রিকায় মতিউর রহমানের সেই করজোড়ে তওবার ছবিও পরদিন প্রকাশিত হয়।  

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল। তখন দুই প্রধান নেত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে জেলে নেওয়ার পর ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’র আলোচনা জোরদার হয়েছিল। তখন তাঁদের দলসহ অনেকেই অভিযোগ করেছিল, ‘দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে’; যা পরে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ হিসেবে পরিচিতি পায়।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS