বাগেরহাটে প্রজনন খামারে ১৮ মহিষের রহস্যজনক মৃত্যু

বাগেরহাটে প্রজনন খামারে ১৮ মহিষের রহস্যজনক মৃত্যু

বাগেরহাটের ফকিরহাটে অবস্থিত দেশের একমাত্র মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে ১৮টি মহিষের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।  

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খামারের মাঠ ও শেডে এ মহিষগুলোর মৃত্যু হয়।

আরও দুটি মহিষ  মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মহিষগুলোর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে স্থানীয়দের দাবি খামারের অভ্যন্তরে থাকা পুকুর পাড়ে মাছের জন্য রাখা খাবার খেয়ে মহিষগুলোর মৃত্যু হয়েছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলাকেও দায়ী করেছেন অনেকে।  

জানা যায়, প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার সকালেও ঘাস খাওয়ানোর জন্য খামারের ভেতরে পুকুর সংলগ্ন মাঠে নেওয়া হয় পূর্ণবয়স্ক মহিষগুলোকে। কিছুক্ষণ পরই মহিষগুলো ছটফট করতে শুরু করে। একপর্যায়ে কয়েকটি মহিষ মারা যায়। তখন দ্রুত বাকি মহিষগুলোকে শেডে নিয়ে আসা হয়। বিকেল পর্যন্ত ১৮টি মহিষের মৃত্যু হয়েছে। আরও দুটি মহিষ মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে খামার কর্তৃপক্ষ।
মহিষ প্রজনন খামারের কর্মী আক্তার হোসেন বলেন, সকাল ৬টায় প্রজনন কেন্দ্রের শেড থেকে মহিষগুলোকে বাইরে বের করা হয়। ১০টার দিকে হঠাৎ দেখতে পাই, কয়েকটি মহিষ মাঠের ভেতর ছটফট করছে। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি মহিষ মারা যায়। দ্রুত সুস্থ মহিষগুলোকে শেডে ফিরিয়ে নিয়ে যাই।  

একসঙ্গে এত মহিষের মৃত্যুর কারণ জানতে বাগেরহাট জেলা ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা. মনোহর চন্দ্র মণ্ডলের নেতৃত্বে কয়েকটি মহিষের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। মহিষগুলোর প্রয়োজনীয় অঙ্গ পরীক্ষার জন্য ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে বলে জানান ডা. মনোহর চন্দ্র মণ্ডল।

তিনি বলেন, মহিষের মৃত্যুর খবর পেয়ে দ্রুত প্রজনন খামারে ছুটে আসি। এসে দেখতে পাই, বেশ কয়েকটি মহিষ মারা গেছে। মহিষগুলোর বিভিন্ন অর্গান স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়েছে। দুটি মহিষ এখনো অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন। মহিষের মৃত্যুর সঠিক কারণ আমরা এখনো জানতে পারিনি। অর্গান স্যাম্পল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মহিষের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

এদিকে মহিষের মৃত্যুর খবর শুনে দুপুরের পরে স্থানীয় বাসিন্দারা খামারের ভেতরে জড়ো হন। তারা বলতে থাকেন, যেখানে মহিষগুলো খাবার খাচ্ছিল, তার পাশেই পুকুরপাড়ে মাছের জন্য রাখা খাবার খেয়ে মহিষগুলোর মৃত্যু হয়েছে।  

স্থানীয় রাজু নামে এক ব্যক্তি বলেন, খামারের ভেতরে যে পুকুর রয়েছে, ওই পুকুরে খামারের কর্মচারীরা মাছ চাষ করেন। ওই মাছের জন্য রাখা পচা খাবার খেয়ে মহিষগুলো মারা গেছে। আর দীর্ঘদিন ধরে এখানের যারা দায়িত্বে আছেন, তারা তাদের ইচ্ছেমতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। যার কারণে পচা ও মানহীন খাবার খেয়ে মাঝে মধ্যেই মহিষ অসুস্থ হয়। যারা মাছ চাষ করেছেন, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক খামারের এক কর্মচারী বলেন, ইউরিয়া, খৈল, পচা গোবরসহ বিভিন্ন খাদ্য মিশিয়ে মাছের খাবার তৈরি করা হয়। পুকুরপাড়ে কিছু খাবার রাখা ছিল, ওই খাবার সকালে কয়েকটি মহিষ খেয়েছে।  

মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আহসান হাবীব বলেন, ১৮টি মহিষের মৃত্যু হয়েছে, দুটি মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।  

খামারের কয়েকজন কর্মচারী পুকুরে মাছ চাষ করেন বলে স্বীকার করেন এ কর্মকর্তা।

খবর শুনে খামার পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা ডা. সাহেব আলী।

১৯৮৪-৮৫ অর্থবছরে ফকিরহাটের শুকদারা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত মহিষ খামারে ছোট বড় বর্তমানে ৪৩৭টি মহিষ রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS