কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি এলাকায় ছাত্র আন্দোলনে মাসুম মিয়া (২০) নামে এক যুবক নিহতের ঘটনায় সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আকম বাহাউদ্দীন বাহার ও তার মেয়ে সিটি মেয়র তাহসীন বাহারসহ ৬২ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ সময় মামলায় আরও অন্তত ৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
রোববার (১৮ আগস্ট) রাতে বাদী হয়ে সদর দক্ষিণ মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন নগরীর দিশাবন্দ এলাকার মৃত তাজুল ইসলামের ছেলে আবদুল হান্নান।
বিষয়টি সময় সংবাদকে নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর ভূঁইয়া।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় কুমিল্লা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল খায়ের মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বাহারকে। দ্বিতীয় আসামি করা হয় তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের পলাতক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনাকে।
এ ছাড়া কুমিল্লা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী যুবলীগের আহবায়ক ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, কুমিল্লা সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আহম্মেদ নিয়াজ পাভেল, কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম রিন্টু, সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান পিয়াস, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হাবিবুর আল আমিন সাদী, ক্রিকেট বোর্ডের কাউন্সিলর সাইফুল আলম রনি (জামাই রনি)।
আরও রয়েছেন: কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর সরকার মাহমুদ জাবেদ, কুমিল্লার বাগিচাগাঁওয়ের কাউসার জামান কায়েস, তালপুকুর পাড়ের সুজন দত্ত, কালিয়াজুড়ির মুরাদ মিয়া, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আজাদ হোসেন, কাউন্সিলার আনোয়ার হোসেন, কাউন্সিলর ইকরামুল হক, রেইসকোর্সের আবদুল কাইয়ূম, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আবুল হাসান, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর মাসুদুর রহমান মাসুদ, কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক শিহানু, কুমিল্লার মধ্যম আশ্রাফপুরের নাজমুল ইসলাম শাওন, ছাত্রলীগ নেতা সালেহ আহম্মেদ রাসেল, কুমিল্লার অশোকতলার শাহ আলম খান, শাসনগাছার আবু হেনা, সাক্কু, ধর্মপুরের শহীদুল ইসলাম চপল, ফখরুল ইসলাম রুবেল, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর গাজী গোলাম সরওয়ার শিপন।
আসামিদের মধ্যে আরও রয়েছেন: কুমিল্লার সদর দক্ষিণের শ্রীমন্তপুরের দুলাল হোসেন অপু, নেউয়ারার জাকির হোসেন, পাথুরিয়াপাড়ার প্রিতুল, শাকতলা মীর পুকুর পাড়ের রবিন, কালা মোস্তফা, অশোকতলার সাইফুল ইসলাম খোকন, শ্রীভল্লভপুরের মো. মেহেদী, পাঁচথুবির চেয়ারম্যান হাসান রাফি রাজু, শিমপুরের মনিরুজ্জামান মনির, ব্রাহ্মণপাড়ার ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান শরীফ, শিমপুরের নিতান্ত, শ্রীভল্লবপুরের আবদুল মালেক ভূঞা, মো. খাইরুল হাসান, মো. হানিফ দুলাল, ঢুলিপাড়ার রাশেদুজ্জামান রাশেদ, শাসনগাছার জালাল, দক্ষিণ বিজয়পুরের মো. জাফর আহাম্মদ শিপন, মোস্তফাপুরের মুন্সীবাড়ির মো. হাসান, মনোহরপুরের মোখলেছুর রহমান, বাগিচাগাঁওয়ের শফিকুর রহমানের ছেলে বাপ্পি, দৌলতপুরের ছায়া বিতানের জালাল (পিচ্চি জালাল), কুমিল্লা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নুর মোহাম্মদ সোহেল, দক্ষিণ চর্থার কাউসার আহমেদ খন্দকার ও আকাশ, মুন্সেফবাড়ির ফরহাদ উল্লাহ, লক্ষ্মীনগরের কবির হোসেন, দিশাবন্দের গোলাম মোস্তফা, দুলাল মিয়া, জিয়াউর রহমান, লক্ষ্মীনগরের জালাল, সুজানগর চৌমুহনীর জালাল ও হানিফসহ অজ্ঞাত ৪০০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ৪ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা সদর দক্ষিণ মডেল থানাধীন নন্দনপুর সাকিন কোটবাড়ি বিশ্বরোড পাকা রাস্তার ওপর শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি করছিলেন। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে বাহাউদ্দিন বাহার ও তাহসীন বাহারের হুকুমে মাসুম মিয়াকে (২০) গুলি করে এবং কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় আরও অনেকে আহত হন।
প্রথমে মাসুম মিয়ার পরিচয় না পাওয়ায় তাকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে স্বজনরা মরদেহ মাসুম মিয়ার বলে শনাক্ত করেন। মাসুম মিয়া কুমিল্লা নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর রামপুরের শাহিন মিয়ার ছেলে।