আরব লিগ সিরিয়াকে পূর্ণ মর্যাদার সদস্য হিসেবে পুনর্বহাল করলেও অনেক সদস্য আসাদ প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে সন্দিহান। সিরিয়া সংকট সমাধানে দামেস্কের আন্তরিকতা দেখতে চায় তারা।
বাকি বিশ্ব যখন একাধিক সংকট নিয়ে ব্যস্ত, মধ্যপ্রাচ্যে তখন বিভিন্ন শক্তির মধ্যে আপোশের মাধ্যমে ঐক্যের নতুন উদ্যোগ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রথমে চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ দেখা গেল৷ সুন্নি ও শিয়া শক্তিকেন্দ্রের মধ্যে সেই সমঝোতার জের ধরে ইয়েমেন সংকট সমাধানের আশা বাড়ছে। এবার ইরানের সহযোগী সিরিয়ার বাশার আল আসাদকেও আরব জগতে আবার স্বাগত জানানোর সিদ্ধান্ত নিলো আরব লিগ৷ প্রায় এক দশকের সাসপেনশন তুলে নিয়ে রোববার সিরিয়াকে আবার পূর্ণমর্যাদার সদস্য হিসেবে গ্রহণ করলো ২২ সদস্যের এই রাষ্ট্রজোট৷ ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে সে দেশের বিরুদ্ধে এমন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের জের ধরে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ অবসানেরও উদ্যোগ নিতে চায় আরব লিগ। সেইসঙ্গে যুদ্ধের কারণে প্রতিবেশী দেশে সিরিয়ার শরণার্থীদের ঢল ও গোটা অঞ্চল জুড়ে মাদক চোরাচালানের সমস্যাও বন্ধ করতে চায় এই রাষ্ট্রজোট৷ তবে এমন সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও বিষয়টি নিয়ে আরব লিগের মধ্যে অস্বস্তি পুরোপুরি দূর হয়নি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশ সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উপর জোর দিলেও কাতারের মতো দেশ নিঃশর্তে এমন পদক্ষেপের পক্ষে ছিল না। তবে কাতার আশা করছে, যে আঞ্চলিক ঐকমত্যের মাধ্যমে এমন সিদ্ধান্তের পর বাশার আল আসাদ সরকার সে দেশের সংকটের শিকড় নির্মূলের প্রেরণা পাবে। মূলত জর্ডানের উদ্যোগে এই বোঝাপড়া সম্ভব হলেও সে দেশও সিরিয়ার সরকারের উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক সমাধানসূত্র, শরণার্থী ও মাদক সংকটের মতো আনুষাঙ্গিক সমস্যা মেটানোর ক্ষেত্রে আন্তরিক পদক্ষেপের ডাক দিয়েছে।
মার্কিন প্রশাসনও আরব লিগের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে৷ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, সিরিয়ায় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ফেরাতে আরব সহযোগীদের লক্ষ্য সম্পর্কে অ্যামেরিকা একমত হলেও সে বিষয়ে বাশার আল আসাদের আন্তরিকতা নিয়ে ওয়াশিংটনের সংশয় দূর হচ্ছে না। ফলে এই মুহূর্তে আরব লিগে সিরিয়াকে ফেরানোর সিদ্ধান্তের পক্ষে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। সিরিয়ার বিরোধী জোটও আরব লিগের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে।
আরব লিগের মহাসচিব আহমেদ আবুল গাইত কায়রোয় বলেন, সিরিয়াকে সদস্য হিসেবে পুনর্বহাল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অর্থ সে দেশের সঙ্গে আরব দেশগুলির সম্পর্ক স্বাভাবিক করা নয়। প্রত্যেক দেশকে সে বিষয়ে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জর্ডান, সৌদি আরব, ইরাক, লেবানন, মিশর ও আরব লিগ মন্ত্রী পর্যায়ের এক গোষ্ঠী গঠন করে সিরিয়া সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেবে বলে আরব লিগ জানিয়েছে। সিরিয়ায় ত্রাণ সাহায্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রেও এই রাষ্ট্রজোট সহায়তা করবে।
সিরিয়া আরব দেশগুলির উদ্দেশ্যে ‘পারস্পরিক শ্রদ্ধা’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। আসাদ প্রশাসনের মদতদাতা হিসেবে পরিচিত রাশিয়া আরব লিগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। আগামী ১৯ মে রিয়াদে আরব লিগ শীর্ষ সম্মেলনে বাশার আল আসাদ উপস্থিত থাকবেন কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।