চার দিনের ভারত সফর শেষে ঢাকায় ফিরে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, সেখানে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কার কার সঙ্গে সে আলাপ-আলোচনা হয়েছে এবং কী বিষয়ে হয়েছে, সে সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে পারবেন না।
জি এম কাদের বলেন, ‘কেননা, ওই আলাপগুলো ওইভাবেই করা হয়েছে। ওনারা যদি প্রকাশ করতে চান, করবেন। আমার পক্ষ থেকে ওনাদের পারমিশন (অনুমতি) ছাড়া কোনো কথা বলতে পারব না।’
তবে জি এম কাদের বলেন, বাংলাদেশে একটি সুন্দর নির্বাচন চায় ভারত; এবং ভারত চায়, নির্বাচনের আগে এবং পরে বাংলাদেশে যাতে কোনো ক্রমেই সহিংসতা, অরাজকতা না হয়।
ভারত সফর শেষে আজ বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকায় ফেরেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে জি এম কাদের সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
২০ আগস্ট ভারত সফরে গিয়েছিলেন জাপার চেয়ারম্যান ও সংসদ বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের। স্ত্রী শেরিফা কাদের ও চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মশরুর মাওলা এই সফরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে ভারতের চাওয়া সম্পর্কে জি এম কাদের বলেন, ‘ওনারা একটা ভালো নির্বাচন দেখতে চান বাংলাদেশে এবং সময়মতো যাতে হয়। নির্বাচনের আগে এবং পরে যাতে কোনো সহিংসতা বা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় অনিশ্চিত কিছু না হয়। এটা হলে ওনারা খুশি হবেন। কারণ, এখানে ওনাদের অনেক ধরনের বিনিয়োগ আছে।’
ভারতের প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশ যদি স্থিতিশীল থাকে এবং সার্বিকভাবে সুন্দর একটা নির্বাচনের মাধ্যমে যদি পরবর্তী সরকার গঠিত হয়, তাহলে তাদের পক্ষে কাজকর্ম করা সহজ হবে। তারা প্রত্যাশা করেন, আমরা সবাই মিলে ওই ধরনের একটি পরিবেশ সৃষ্টি করি, যাতে সুন্দর একটি নির্বাচন হয়। এবং নির্বাচনের আগে এবং পরে দেশে কোনো সহিংসতা, অরাজকতা না হয়, স্থিতিশীলতা কোনো ক্রমেই যাতে নষ্ট না হয়।’
নির্বাচন সুষ্ঠু করার বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর যে মতদ্বৈধতা, এ ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান কী। এ প্রশ্নের জবাবে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেন, ‘ভারত বলেছে, এটা আপনাদের নিজস্ব ব্যাপার। আমরা চাই, নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এটার সুরাহা করবেন।’
এ ক্ষেত্রে ভারতীয় কর্মকর্তারা জাতীয় পার্টিকে উদ্যোগী ভূমিকা নেওয়ার কথাও বলেছেন বলে জানান জি এম কাদের। তাঁরা বলেছেন, যেহেতু জাতীয় পার্টির সবার কাছে একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে, তাই সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে, সবাইকে একসঙ্গে করে, সুন্দর একটা নির্বাচন করতে পারলে তারা খুশি হবেন।
বর্তমান সংবিধান অনুসারে জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণ করবে কি না, জানতে চাইলে জি এম কাদের বলেন, ‘এটা আমি অনেকবার বলেছি, আমাদের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখনো সময় আসেনি। আমরা কী করব, সামনে কারও দিকে যাব কি না, এটা পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে। আমরা আরও কিছুদিন জিনিসটা দেখেশুনে তারপর আমরা ঠিক করব। আর নির্বাচন বর্জন করব, এটা কিন্তু আমরা কোনো দিন বলিনি। তবে আমরা চাইব, নির্বাচনটা যাতে ভালো হয়।’
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার যে চাপ, সেটি নিয়ে ভারত এক ধরনের নেগোসিয়েশন করছে গণমাধ্যমে খবর এসেছে, এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে জাতীয় পার্টির চোরম্যান কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এটা ভারতীয়রা, আমেরিকানরা বলতে পারবে। ওনাদের মধ্যে কী আলাপ-আলোচনা হয়েছে, আউটসাইডার হিসেবে এটা তো আমরা পক্ষে জানাও সম্ভব না।’
নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অবস্থানের বিষয়ে ভারত কী বার্তা দিয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে জি এম কাদের বলেন, ‘না, বার্তা দেয়নি। আমাদের দল আমরা চালাব, ওনাদের বার্তা দেওয়ার কিছু নেই। ওনারা বলেছেন যে একটা ভালো নির্বাচন হোক এবং সহিংসতা না হোক—নির্বাচনের আগে এবং পরে। যেন দেশটা শান্তিপূর্ণভাবে চলে। এটা আমাদের সকলের স্বার্থেই দরকার।’
বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে জাতীয় পার্টি ভারতকে কী জানিয়েছে, এ প্রশ্নে দলটির চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, তাদের সে রকম কোনো প্রশ্ন করা হয়নি এবং এর কোনো উত্তরও তারা দেননি। তিনি জানান, এই সফরে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে তাদের সঙ্গে খুব বেশি আলাপ হয়নি।