রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই আসামি মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে বলে রাজশাহী জেলা কারাগার থেকে প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
আজ সন্ধ্যার পর থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আগের মতো সাংবাদিকেরা কারাগারের প্রধান ফটক পার হয়ে সামনের চত্বরে যেতে পারেননি। তাঁদের প্রধান ফটকের বাইরে রাস্তার ওপরে অপেক্ষা করতে হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকেই গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে অনেক মানুষ এই ফটকের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন। রাত নয়টার দিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের একটি পিকআপ ভেতরে ঢোকে। সোয়া নয়টার দিকে কারাগারের পেছনের দিকের গেট দিয়ে সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসনের গাড়িসহ চারটি গাড়ি ঢুকতে দেখা যায়। পরে রাত ১১টার দিকে এসব গাড়ি কারাগার ত্যাগ করে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের বরখাস্ত হওয়া সাবেক সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত অধ্যাপক এস তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম। রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের চিঠি ৫ জুলাই ডাকযোগে রাজশাহী কারাগারে এসে পৌঁছায়। তখন কারা কর্তৃপক্ষ বলেছিল, জেল কোড অনুযায়ী এ চিঠি পাওয়ার ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হয়।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে গত মঙ্গলবার এই দুই আসামির স্বজনেরা সাক্ষাৎ করে গেছেন। সাক্ষাতে তাঁরা স্বজনদের কাছে মাফ ও দোয়া চেয়েছেন বলে জানা গেছে।
জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। পরিবারের সব সদস্যের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। সবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছেন। বিচার নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। জাহাঙ্গীরের বাবা আজিম উদ্দিন বলেন, ‘ছেলের সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছে। মাঝখানে কাঁটাতার ছিল। ছেলেকে ছুঁয়ে দেখতে পারিনি। ছেলে দোয়া চেয়েছে।’
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে অধ্যাপক এস তাহের খুন হন। ম্যানহোল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০০৮ সালের ২২ মে মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।
রায়ে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের আত্মীয় আবদুস সালামকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য দুই আসামি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সীকে খালাস দেন আদালত। আপিলে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই আসামি নাজমুল আলম ও আবদুস সালামের সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে।
সর্বশেষ মঙ্গলবার সকালে অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি জাহাঙ্গীরের ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।