পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রী থেকে ক্ষমতাচ্যুত করার নেপথ্যের ‘নাটের গুরু’ খ্যাত জাহাঙ্গীর খান তারিনের।
জানা গেছে, দুটি আসনেই ইমরান সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে বিপুলে ভোটে হেরে গেছেন জাহাঙ্গীর।
পাকিস্তান অবজারভারসহ দেশটির বেশকিছু সংবাদমাধ্যমে এ খবর জানানো হয়েছে।
জাহাঙ্গীর খান ছিলেন ইমরান খানের এক সময়ের বিশ্বস্ত সঙ্গী। পরে ইমরানের দল পিটিআই থেকে সরে গিয়ে ইস্তেহকাম-ই-পাকিস্তান পার্টির (আইপিপি) চেয়ারম্যান হন জাহাঙ্গীর তারিন।
আর তার সেই দল এবারের সাধারণ নির্বাচনে মাত্র ২টি আসনে জয়ী হতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া ইমরানপন্থি স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে বিপুলে ভোটে হেরে গেছেন জাহাঙ্গীর নিজেই।
নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আইপিপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর তারিনকে হারিয়ে লোধরানে এনএ-১৫৫ আসনে সাদিক খান বালুচ ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৭১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। একইভাবে মুলতানে এনএ-১৪৯ আসনে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মালিক আমির ডোগার ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এ আসনে ৫০ হাজার ১৬৬ ভোট পেয়ে পরাজিত হন জাহাঙ্গীর তারিন।
উভয় আসনে জাহাঙ্গীর তারিনের পরাজয় তার দলের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ধাক্কা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
কে এই জাহাঙ্গীর খান তারিন?
১৯৫৩ সালের ৪ জুলাই পূর্ব পাকিস্তানে তথা আজকের বাংলাদেশের কুমিল্লায় জন্ম নেন জাহাঙ্গীর তারিন। তখন তার বাবা কুমিল্লায় পুলিশ অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন তিনি।
সপরিবারে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে আসেন জাহাঙ্গীর তারিন। এরপর জাহাঙ্গীর দেশ-বিদেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করেন।
রাজনীতির মাঠে নেমে পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খানের সঙ্গে তেহরিক-ই-ইনসাফে (পিটিআই) যুক্ত হন তারিন। এক সময় জাহাঙ্গীর তারিনকে পিটিআইয়ের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলা হতো।
কিন্তু দল ক্ষমতায় আসার পর ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হলে দুই নেতার মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। এরপর থেকে নওয়াজ শরিফের দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে জাহাঙ্গীরের।
এক পর্যায়ে দলের ভেতরেই নিজ অনুসারীদের নিয়ে আলাদা একটি গোষ্ঠী গঠন করেন তারিন। নওয়াজের সঙ্গে যোগসাজশেরই ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করেন কয়েকশত মিলিয়ন ডলারের মালিক জাহাঙ্গীর তারিন।
পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল অনাস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বিদায় নেন ইমরান খান। সেই সময় জাতীয় পরিষদের ৩৪২ জন সদস্যের মধ্যে ১৭৪ জন সদস্য তার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে ভোট দিয়েছিলেন।
এক কথায় ইমরানকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনের ‘নাটের গুরু’ ছিলেন এই জাহাঙ্গীর খান তারিন।