চকলেটপ্রেমীদের জন্য দুঃসংবাদ। চকলেট তৈরির মূল উপাদান কোকোর দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে চকলেট কোম্পানিগুলো এই বাড়তি দাম ক্রেতাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। অর্থাৎ দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা। এমন এক সময়ে এই উদ্যোগ তারা নিয়েছে, যখন ক্রেতারা চকলেট বাবদ খরচ কমানোর চেষ্টা করছে।
মূলত পশ্চিম আফ্রিকার যেসব দেশ থেকে কোকো আসে, সেসব দেশে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এই পণ্যের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, চকলেটের দাম কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে। দাম বাড়া সত্ত্বেও গত কয়েক বছরে চকলেট কোম্পানিগুলো বিপুল মুনাফা করেছে; কারণ দাম বাড়লেও এত দিন চাহিদা কমেনি। কিন্তু রয়টার্সের হাতে যেসব তথ্য-উপাত্ত এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, কোকোর দাম ৪৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে, চিনির দামও এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাছাকাছি। এতে মানুষের চকলেটপ্রেমে ভাটা পড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
গত দুই বছরে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বাজারে চকলেটের দাম ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ফলে তারা চকলেট খাওয়া কমাতে শুরু করেছে, বাজার গবেষণা সংস্থা নিয়েলসেনের উপাত্তে এই চিত্র দেখেছে রয়টার্স।
বিশ্ববিখ্যাত চকলেট ব্র্যান্ড ক্যাডবেরির মূল কোম্পানি মেন্ডেলেজের প্রধান নির্বাহী ডিরক ভ্যান ডে পাট রয়টার্সকে বলেন, মানুষ এখন অনেক বেশি মূল্য সচেতন, ফলে কেনাকাটা করার আগে তারা এখন মূল্য পর্যালোচনায় বেশি সময় দিচ্ছে।
এদিকে মেন্ডেলেজ মনে করছে, কোকো ও চিনির এই মূল্যস্ফীতি চলতে থাকবে। তবে তারা উৎপাদন বাড়াতে কীভাবে কম দামে এসব উপকরণ কেনা যায়, তার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে।
জুলাই মাসে মেন্ডেলেজের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা লুসা জামারেলা বলেন, ‘বাস্তবেই চিনি ও কোকোর দাম বাড়ছে। গত এক বছরের বাজার পরিস্থিতি দেখে আমাদের মনে হচ্ছে, এসবের দাম ৩০ শতাংশের বেশি বাড়বে, বিশেষ করে কোকোর দাম।’
কিন্তু দুই বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকার কারণে খুচরা বিক্রেতারা উল্টো দাম কমানোর তাগিদ দিচ্ছেন; এতে চকলেট কোম্পানিগুলোর মুনাফা ও লাভের অঙ্ক উভয়ই কমতে পারে।
এমনকি এমনও হয়েছে যে দামের বিষয়ে ঐকমত্য না হওয়ার কারণে মেন্ডেলেজ বেলজিয়ামের সুপারমার্কেট চেইন কোল রুই টসের তাক থেকে চকলেট সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, মূল্য সংশোধন করা অত সহজ হবে না।
তবে দাম যতই হোক না কেন, চকলেটপ্রেমীরা চকলেট থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে না—এই পুরোনো বিশ্বাসে ভর করে চকলেট কোম্পানিগুলো মনে করছে, চলতি বছর তাদের রাজস্ব ও মুনাফা বাড়বে।
নিয়েলসনের সূত্রে রয়টার্স অবশ্য জানিয়েছে, চলতি বছর মেন্ডেলেজের চকলেট বিক্রির পরিমাণ অনেকটাই কমেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে যেখানে বিক্রয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ, মধ্য জুন থেকে মধ্য জুলাই পর্যন্ত সময়ে তা ৩ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে এই সময়ের মধ্যে তারা যে চকলেটের দাম অনেক বৃদ্ধি করেছে, তা নয়।
আরেক চকলেট কোম্পানি হার্শে চকলেটের মূল্যবৃদ্ধি করায় এই সময়ে তাদের বিক্রি ক্রমবর্ধমান হারে কমেছে। অথচ এর মধ্যে হার্শে চলতি ও আগামী বছরের জন্য চকলেটের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। তবে দাম যথাসম্ভব কম রাখতে উৎপাদন প্রক্রিয়া অটোমেশনে জোর দিয়েছে হার্শে।
চকলেটের উপাদান কোকোর উৎপাদন হয় মূলত পশ্চিম আফ্রিকা অঞ্চলে। কিন্তু আইভরি কোস্ট ও ঘানার মতো দেশগুলোতে দুই বছরে ধরে এক সময় যেমন খরা হচ্ছে, তেমনি অন্য সময় অতিবৃষ্টি হচ্ছে। এই দুটি দেশে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ কোকো উৎপাদিত হয়। কিন্তু এসব দেশের কর্তৃপক্ষ কৃষকদের এই পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সহযোগিতা করতে পারছে না। এমনকি ২০১৯ সালে ন্যূনতম আয় নিশ্চিত করার যে ব্যবস্থা চালু হয়েছিল, তা–ও অকার্যকর হয়ে পড়েছে।