গৃহকর্মীর মজুরি ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি বলে জানিয়েছেন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক।
তিনি বলেন, আগামীতে যারা সরকার গঠন করবে তাদের কর্মপরিকল্পনায় ন্যায়পাল নিয়োগ এবং গৃহকর্মী সুরক্ষায় আইনি কাঠামো তৈরি অগ্রাধিকার পাবে বলে আশা করি। অনেক ক্ষেত্রেই গৃহকর্মীদের বুয়া হিসেবে সম্বোধন করা হয়। এই ধরনের অমর্যাদামূলক ও আপত্তিকর শব্দ পরিহার করা উচিত। গৃহকর্মীদের নিবন্ধনের আওতায় আনা হলে তাদের সামাজিক স্বীকৃতি ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) এফডিসিতে গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষা নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ও গণসাক্ষরতা অভিযানের যৌথভাবে আয়োজিত ছায়া সংসদে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতা করেন নেটস বাংলাদেশ ও এডুকেশন আউট লাউড। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক বলেন, নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্টভাবে গৃহকর্মীদের অধিকারের কথা বলা হয়নি, তবে বলা উচিত ছিল। তাদের বেতন কাঠামো নিয়েও কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করা হয়নি। জীবনযাপনের ব্যয় বিবেচনা করে গৃহকর্মীদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারিত হওয়া উচিত। তাদের অধিকার রক্ষায় স্বতন্ত্র ন্যায়পাল নিয়োগ করা হলে জবাবদিহিতার চর্চা গড়ে উঠবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, একটি স্বৈরাচার সমাজব্যবস্থার ভিতরে একটি সংবেদনশীল, যত্নশীল পলিসি প্রত্যাশা করা যায় না। বিগত সরকারের আমলে গৃহকর্মীদের মতো অত্যন্ত সংবেদনশীল শ্রমিকদের কল্যাণে সরকার কোনো কিছুই করেনি। গৃহকর্মীদের জন্য একটি নীতি প্রণয়ন করলেও তা কখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে গৃহকর্মীরা ব্রিটিশ দাসপ্রথার মতোই দাস-দাসী হিসেবেই রয়ে গেছে। ফলে তারা তাদের ন্যায্যঅধিকার ও স্বীকৃতি থেকে এখনো বঞ্চিত। গৃহকর্মীরা পারিশ্রমিক, কর্মঘণ্টা, চিকিৎসা-ছুটি ও বিনোদনসহ কোনোটাই তারা অন্যান্য কর্মজীবী মানুষের মতো পাচ্ছে না। সময়ের পরিক্রমায় দাসপ্রথা বিলুপ্ত হলেও, গৃহকর্মীদের প্রতি অমানবিক আচরণ দেখে মনে হয় এটি সভ্য সমাজ ব্যবস্থার দাসপ্রথার নব্য সংস্করণ। আমরা গৃহকর্মীদের প্রতি মানবিকতা প্রদর্শন করতে না পারলে রাষ্ট্র যতই গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করুক না কেন আমরা এই রাষ্ট্রকে মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে বলতে কষ্ট হবে। একা সরকারের পক্ষে সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ গৃহকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ, এনজিও এবং গণমাধ্যমসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ব্যতিত গৃহকর্মীদের অধিকার রক্ষা সম্ভব নয়। এ কারণে আগামী নির্বাচনের পূর্বে রাজনৈতিক দলগুলো যদি তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সমাজের অনগ্রাসর জনগোষ্ঠী গৃহকর্মীদের বেতন—ভাতা, ছুটি এবং বোনাসসহ অন্যান্য অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে তাহলে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা ও সমর্থন বাড়বে।
তিনি বলেন, আমাদের দুঃখবোধ হয় স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের কোনো সংসদে গৃহকর্মীদের অধিকার নিয়ে কোনো কথা হয়নি, তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে সংসদ সদস্যরা সংসদে সোচ্চার হননি। আশা করি, হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে যে সংসদ গঠিত হবে সেই সংসদে অত্যন্ত সংবেদনশীল গৃহকর্মীদের অধিকারসহ ন্যায্য দাবি আদায়ে আলোচনা হবে। বিশেষ করে সংসদে যারা নারী সদস্য থাকবেন তারা গৃহকর্মীদের সুরক্ষায় অন্যান্য সাংসদদের নিয়ে ককাস গঠন করবে। যে ককাস গৃহকর্মীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ও গণসাক্ষরতা অভিযানের যৌথ আয়োজনে ‘আইন করে নয়, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই গৃহকর্মীর অধিকার সুরক্ষা করতে পারে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, ড. এস এম মোর্শেদ, কবি জাহানারা পারভীন ও সাংবাদিক মো. আল—আমিন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।