রসালো ফল তরমুজে সয়লাব বরিশালের পাইকারি বাজার। চাহিদা থাকায় বাজারে তরমুজের আমদানিও হচ্ছে যথাযথ প্রতিনিয়ত।আর গত কয়েকদিন ধরে বাজারদর ভালো পাওয়ার কথা জানিয়েছেন কৃষক ও আড়তদাররা। যদিও পাইকারী পর্যায়ে দর বেশি হলে ভোক্তা পর্যায়ে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন পাইকারি ক্রেতারা।
বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ও পাইকারি ব্যবসায়ী মো. সোহেল শেখ বলেন, বৃহত্তর খুলনাতেও তরমুজের আবাদ হয়, তবে আমাদের ওখানকার থেকে বরিশাল অঞ্চলে আগাম তরমুজ বাজারে এসেছে। তাই খুলনা ও বাগেরহাটে তরমুজ বিক্রির উদ্দেশ্য নিয়ে বরিশাল শহরের পোর্টরোডের পাইকারি বাজারে এসেছি। কিন্তু এখানে পাইকারি বাজারে তরমুজের দাম অনেক বেশি।
তিনি বলেন, ৫-৭ কেজির তরমুজ যদি প্রতি ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা কেজি দরে কিনতে হয়, তাহলে শ্রমিক ও পরিবহন খরচা দিয়ে খুলনা নিয়ে কত টাকায় বিক্রি করবো সেটাই বুঝতে পারছি না।
অপর পাইকারি ক্রেতা বাবুল মোল্লা বলেন, মাঝারি আকারের একটি তরমুজ যদি বরিশালের পাইকারি বাজার থেকে ২শ থেকে ২২০ টাকায় কিনতে হয়, তাহলে সেটা কিনে খুলনা বা বাগেরহাট পর্যন্ত নিতেই তিনশ টাকায় গিয়ে ঠেকবে। তারপর আমরা কত টাকায় বিক্রি করবো। আর খুচরো ব্যবসায়ী কত টাকায় বিক্রি করবেন। এ রকম হলে ভোক্তারা তো তরমুজ কিনেই খেতে চাইবে না।
বরিশাল নগরের পোর্টরোডের আড়তদার হাসান মাহমুদ বলেন, মৌসুমের শুরুর দিকের থেকে এখন তরমুজের বাজারদর ভালো যাচ্ছে, তার মানে এই নয় দাম চড়া। দাম অনেক কম রয়েছে। আকার ভেদে শত প্রতি তরমুজের দর ১৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। তরমুজের মান যত ভালো এবং আকারে যত বড় তত দাম বেশি। আর এই তরমুজগুলো এখান থেকে পিস হিসেবে কিনে কেজি হিসেবে বিক্রি করছে খুচরো বিক্রেতারা। আর কেজি হিসেবে বিক্রির কারণেই তরমুজের দর ভোক্তা পর্যায়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে, পাইকারি বাজারে ৫-১০ টাকার দর বৃদ্ধি খুচরো বাজারে কোনো প্রভাব ফেলে না, শুধু কৃষকের ভাগ্য ফেরায়।
তিনি বলেন, বাজারে বরিশাল বিভাগের সব জায়গার তরমুজ পাওয়া গেলেও এখন সব থেকে বেশি তরমুজ আসছে পটুয়াখালী ও ভোলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে। এক সময়ে উত্তরাঞ্চল থেকে আনা হলেও এখন দক্ষিণাঞ্চল তথা গোটা বরিশাল বিভাগের উৎপাদিত তরমুজ ছড়িয়ে যাচ্ছে গোটা দেশে।
কৃষক নিপু সর্দার বলেন, বরিশালের উপকূলীয় জেলাগুলো তরমুজ চাষের জন্য উত্তম। উৎপাদন ভালো হওয়ায় বছরে বছরে তরমুজ চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও প্রাকৃতিক বিভিন্ন বিপর্যয়ের কথা চিন্তা করে তরমুজ চাষ করতে হয়, তারপরও বাজারদর ভালো থাকলে চিন্তা থাকে না কৃষকদের।
তিনি বলেন, রমজানের আগেও বাজারে তরমুজের দর কম ছিল। এখন কিছুটা ভালো দর পাওয়া যাচ্ছে, আশা করি লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় এবারে ৪৮ হাজার ৩৪৪ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও আবাদ হয়েছে ৪৯ হাজার ৯১৪ হেক্টর জমিতে। যা শতকরা হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি তিন ভাগ বেশি। আর বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পটুয়াখালী জেলায় ২৭ হাজার ৪৯ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে এবং সব থেকে কম ঝালকাঠি জেলায় ১১৯ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে।